ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রুশ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন এড়াতে বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের সব ব্যাংককে এ বিষয়ে সতর্ক করার কথা গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাশিয়ার যেসব ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সে সমস্ত ব্যাংকের সাথে লেনদেনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়েছে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা আসার পর থেকেই রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ নাগরিকদের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। কড়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংককে। রাশিয়াকে চাপের মুখে রাখার জন্য এসব পদক্ষেপে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। খবর বিডিনিউজের। সুইফট থেকে বাদ পড়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভিটিবি ব্যাংক, ব্যাংক অতক্রিতিয়ে, নোভিকম ব্যাংক, প্রমসিয়াজ ব্যাংক, ব্যাংক রোশিয়া, সভকম ব্যাংক ও ভেনশেকনম ব্যাংক বা ভিইবি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও সুইফটের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া ভিইবি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নে রাশিয়া প্রান্তের এজেন্ট। তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করে। ব্যাংকটি কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ায় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতিও এখন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গণমাধ্যমে আসা খবরে বলা হয়েছে, ভিইবি ব্যাংকের তরফ থেকে কয়েক দিন আগে সুইফটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি বার্তা পাঠানো হয়। ওই বার্তায় ভিইবি ব্যাংকের সঙ্গে আপাতত লেনদেন না করতে বলা হয়। সেজন্য বিলম্ব ফি দিতে হবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়।
দেশের বিভিন্ন ব্যাংকেও লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়ে বার্তা পৌঁছেছে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবর দিয়েছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করার পাশাপাশি রাশিয়ার দিক থেকে লেনদেনের বিকল্প প্রস্তাব এলে তাতেও সাড়া দেওয়ার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের সাথে আমাদের লেনদেন করতে হবে কিন্তু তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে, পরে তারা যদি কোনো বিকল্প রাস্তা বলে বা অন্য কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে বলে, তখন বিষয়টি আমরা দেখব।
এদিকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর কতটুকু পড়বে, তা খতিয়ে দেখতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও ক্লিয়ার হয়নি সবকিছু। এখনো জাস্ট প্রথম দিনগুলো আর কি, নিষেধাজ্ঞার…। আমরা ফুল রেইঞ্জ অব ইমপ্যাক্ট কী হয় সেটা নিয়ে আমরা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করেছি। গতকালও (বৃহস্পতিবার) একটা মিটিং করেছি সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে। আশা করছি, হয়ত আরও কিছু মিটিং করতে হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের সাথে বিভিন্ন এঙপোর্ট-ইমপোর্ট, গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস এবং আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আছে, সেখানে রাশিয়ার যে ইনভলভমেন্টগুলো আছে, সেখান পেমেন্টসসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা বলছি, কী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সেটাও আমরা নির্ধারণ করব আগামীতে।
রূপপুর প্রকল্প নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করেন না মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, কিন্তু ডিপেন্ড করছে ভবিষ্যতে যদি আরও ব্যাংকের উপরে নিষেধাজ্ঞা আসে বা সুইফটের উপরে আসে, অথবা বড় বড় যে কোম্পানিগুলো আছে তাদের উপরে যদি নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে জটিলতা হতে পারে।