উপকূলে আছড়ে পড়া সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে বিলীন হচ্ছে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। অব্যাহত জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে গত কয়েক বছরে বিলীন হয়েছে সৈকতের হাজার হাজার ঝাউগাছ। সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে সমুদ্র সৈকতটির অধিকাংশ স্থানে উপড়ে পড়েছে ঝাউ গাছ। আবার বেশ কিছু ঝাউ গাছের গোড়ার মাটি সরে গেলেও আধমরা অবস্থায় কোনোমতে দাঁড়িয়ে রয়েছে শিকড়ের ওপর। এতে সৈকতটির উপর নির্ভরশীল দেড় শতাধিক ব্যক্তিগত কার, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং অর্ধশতাধিক দোকানি ও ভাসমান হকার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইন্টারনেটের বদৌলতে ২০১৩ সালের শুরুতে সৈকতটি অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পর্যটকদের আসা শুরু হয়। সৈকতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের নিয়ে বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠান করা শুরু করেন। আর এ মানুষদের ঘিরে এলাকার কর্মজীবী মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হতে থাকে। সৈকত এলাকায় বসে দোকান। বাড়ে যাতায়াতের গাড়ি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে করা হয় এর চারপাশের সড়কের উন্নয়ন। ২০১৮ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলকে ‘সমুদ্র সৈকত’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সীতাকুণ্ড সমিতি চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রে সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতে বেড়িবাঁধের পর ৬০০ থেকে ৭০০ মিটার জুড়ে রয়েছে ঝাউগাছের বাগান। সাগরের অব্যাহত ঢেউয়ের তোড়ে গাছের মূল থেকে বালু সরে শিকড় বের হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সৈকতে পড়ে থাকা গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার লোকজন।
ঝাউবাগানের ভেতরে থাকা জিয়া হোটেল নামে টং দোকানের মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, ইতিমধ্যে বাগানের তিন–চতুর্থাংশই বিলীন হয় গেছে। অবশিষ্ট অংশটুকুর ভাঙন রোধ করা না গেলে পর্যটকেরা আর এখানে আসবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি। জয়নাল আরও বলেন, সৈকতে বসানো দোকানের আয় দিয়ে অনেক কিছু করেছেন তিনি। তবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জারি করা লকডাউন শুরুর পর দোকান বন্ধে কিছুটা হিমশিম অবস্থায় পড়েছেন তিনি। এর মধ্যে সাগরের জোয়ারে দুই দফা তার দোকান ভেঙে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরের ঝাউ বাগান থেকে সাগর ছিল আরও অন্তত এক কিলোমিটার দূরে। ভাঙনের ফলে এখন এক কিলোমিটারের হাঁটা পথ আর নেই। ভাঙন রোধ করা না গেলে অচিরেই বিলীন হবে এ সৈকতটি।
উপকূলীয় বন বিভাগের সীতাকুণ্ড রেঞ্জের কর্মকর্তা এস এম কামাল হোসেন বলেন, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রে সৈকতটিতে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল করার জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পটি অনুমোদন হলে বর্ষা শেষে সেখানে নতুন গাছের চারা লাগানো হবে। তা না হলে সৈকতের অবশিষ্ট গাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।