করোনাকালেও চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলাম কার্যক্রমে বেড়েছে গতি। অখালাসকৃত এবং জব্দ এসব পণ্যের নিলামে গতি বাড়লেও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে জারি করা নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে, পণ্যের নিলাম সম্পন্ন হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে নিলাম কমিটি দরপত্র যাচাই বাছাই করে সর্বোচ্চ বিডারের (নিলাম অংশগ্রহণকারী) অনূকুলে বিক্রয় অনুমোদন দিবে। তবে যৌক্তিক কারণে সেটি আরো পাঁচদিন বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটি মানা হচ্ছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিডাররা। এমনকি কাস্টমসে ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) চালু হলেও অনুমোদন পেতে পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ। অথচ ই-অকশনে নিলাম প্রক্রিয়া, অনুমোদন এবং খালাস সবকিছু দ্রুতগতিতে হওয়ার কথা।
কাস্টমসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে গত ২৭ অক্টোবর ই-অকশনের যাত্রা শুরু হয়। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে পরদিন ২৮ অক্টোবর বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে দরপত্র জমা দেন বিডাররা। ই-অকশনে তোলা ১৬ লট পণ্যের মধ্যে দরপত্র জমা পড়ে ৮টিতে। এই ৮টির মধ্যে দরপত্র পড়ে ৩৮টি। নিলাম আদেশ মতে, পণ্যের মূল্য ৬০ শতাংশ না উঠলেও অনুমোদন দেয়া যায় না। তবে ই-অকশনে তিনটি লটে ৬০ শতাংশ দর উঠে। তাই ই-অকশন সম্পন্ন হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পরে নিলাম কমিটি তিনটি পণ্যের বিক্রয় অনুমোদন দেয়। অন্যদিকে গত ২৯ অক্টোবর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ১৪৮ লট পণ্য নিলাম তোলা হয়। এতে নিশান, টয়োটা, সুজুকি ব্র্যান্ডের ৪টি বিলাসবহুল গাড়িসহ গার্মেস্টস এক্সেসোরিজ, ফেব্রিক্স, স্টিল আইটেম, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, সিরামিক ও পেপারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ছিল। নিলামে চট্টগ্রামে দরপত্র জমা পড়ে ১৯৭টি এবং ঢাকায় জমা পড়ে ২৬টি। সেই নিলাম সম্পন্ন হওয়ার প্রায় এক মাস হতে চললেও এখনো পণ্যের বিক্রয় অনুমোদন দেয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিয়মিত বিডার এবং ‘আর রেজা’ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জহিরুল ইসলাম নাঈম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিলাম পণ্যের অনুমোদন দিতে দেরি হওয়ায় আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সবাই একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে নিলামের পণ্যে কিনে। কিন্তু অনুমোদন ও নিলামের বিভিন্ন ধাপে ধীরগতির কারণে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেক সময় আমদানিকারকরা মামলা করে দেন, এতে আমাদের জামানাতের ব্যাংক পে অর্ডারও আটকে যায়। নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে যদি ঠিক সময়ে পণ্যের অনুমোদন দেয়া হয়, তাহলে বিডাররা আরো বেশি নিলামে অংশ নিতে উৎসাহী হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কভিড পরিস্থিতিতেও কিন্তু আমরা স্টেকহোল্ডারদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাস্টম হাউসে অনেক অফিসারের রদবদল হয়েছেন। নিলাম পণ্যের অনুমোদন দিতে নিলাম কমিটি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এখন নতুন অফিসার নিলাম কমিটির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই একটু সময় লেগেছে। তবে আমরা দ্রুত অনুমোদন দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ কাস্টম হাউসে সেবার মান বাড়ানো আমাদের লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষও চার্জ পায় না।