নিলামের ২৬ দিন পর দরদাতাদের তালিকা প্রকাশ

বিডারদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার ২৬ দিন পর গতকাল দরদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কেবল তালিকা প্রকাশ করতেই এই দীর্ঘ সময়ের কারণে বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পর তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা। এতোদিন পর তালিকা প্রকাশ করেছে নিলাম শাখার কর্মকর্তারা। এতদিনে পণ্যের বিক্রয় অনুমোদন হয়ে যাওয়ার কথা। এখন কখন কাস্টমস বিক্রয় অনুমোদন দিবে, কখন বিডাররা পণ্য ডেলিভারি নিবে। কেউ জানে না।

এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকে বিড করছেন না। কারণ এতে বিডারদের জামানতের পে অর্ডার মাসের পর মাস আটকে থাকছে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, নিলামে দরপত্র বেশি পড়েছে, তাই যাচাই বাছাই করতে সময় লেগেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ নিলামের ১৪৫ লটের মধ্যে দুটিতে দরপত্র জমা পড়েনি। তবে এবার দরপত্র জমা পড়েছে রেকর্ড ১ হাজার ৪০০টি। নিলামে এর আগে গত মাসের ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে ও ম্যানুয়ালি দরপত্র গ্রহণ করে কাস্টমস। জানা গেছে, ১৪৫ লট পণ্যের মধ্যে রয়েছেএমপিইটি ফিল্ম, ব্যবহৃত কোবেলকো এক্সক্যাভেটর, পপলিন ফেব্রিক্স, টাইলস, ওয়াটার ফিল্টারিং মেশিনারি, নিউ টায়ার, অটো এলপিজি স্টোরেজ ট্যাংক, জিপসাম বোর্ড, আর্ট কার্ড ২৩০ জিএসএম, গাড়ির আয়না, এক্রিলিক পলিমার, এলইডি ল্যাম্প, জ্যাকেট, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, আর্টিফিসিয়াল টার্ফ, রিচার্জবল ফ্যান, ব্লক মেকিং মেশিন, সোডিয়াম সালফেট, মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন ও এক্সেসরিজ, ক্যাপিটাল মেশিনারি, ডিজেল ইঞ্জিন, শ্যাম্পু, লাইমস্টোন, হেলমেট, পেপার, ক্র্যাপ্ট লইনার পেপার, আয়রন ডাস্ট স্ক্র্যাপ, সেকেন্ড হ্যান্ড মেশিনারি, পাইপ ফিটিং, সোলার স্ট্যান্ড ফ্যান, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, উড প্যাকিং ম্যাটেরিয়ালস, গ্যাস স্টোভ পার্টস, প্লাস্টিক ফিল্ম, হোয়াইট স্প্রিট, টেক্সটাইল কেমিক্যালস, স্টিল স্ক্র্যাপ, সোডিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফেরদৌস আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসকে আমরা সব সময় বলে আসছি, যাতে দ্রুত পণ্যের সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশ করে বিক্রয় অনুমোদন দেয়া হয়। এতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও বিডার উভয়ের উপকার হয়। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নিলাম ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে পে অর্ডার আটকে থাকছে। তাই আমরা এই দীর্ঘসূত্রিতার অবসান চাই।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, এবারের বিশেষ নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা পড়েছিল। তাই আমাদের যাচাই বাছাই করতে সময় লেগেছে। আমরা এই নিলামে অনলাইনের পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও দরপত্র নিয়েছি। কারণ অনলাইনে সার্ভার হ্যাং করছিল। তবে এখানে দেখা গেছে, অনেক বিডার শুধুমাত্র পে অর্ডার জমা দিয়ে নিলামে অংশ নিয়েছে। আবার অনেকে অনলাইন ও ম্যানুয়ালে একই পে অর্ডার দিয়ে ভিন্ন লটে অংশ নিয়েছে। তাই আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে তারপর সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশ করেছি। কারণ একটু দেরি হলেও আমরা কাজে স্বচ্চতা নিশ্চিত করতে চাই।

উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষও চার্জ পায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় একদিনে তিন মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধনিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করুন, জনদুর্ভোগ কমান