নির্যাতিত নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা

হডেইজী মউদুদ | শনিবার , ৩ মে, ২০২৫ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন নতুন কোনো ঘটনা নয়, এই নির্যাতনকালে যুগে যুগে বিভিন্ন ধরনে বিভিন্ন প্যাটার্নে হয়ে আসছিল। আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগে কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া থেকে শুরু করে সতীদাহ প্রথাসহ নানান ধরনে আমরা নারীর প্রতি অবর্ণনীয় সহিংসতা দেখে আসছি সেই আদিকাল থেকেই। নারী আর পুরুষ দুই ভিন্ন সত্তা মহান সৃষ্টিকর্তার এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। তিনি এই দুই সত্তাকে একে অপরের পরিপূরক করেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। পুরুষকে শক্তিমত্তা দিয়েছেন, আর নারীকে দিয়েছেন মাতৃত্বের অসাধারণ এক ক্ষমতা। ফলে কন্যা জায়া জননী হিসেবে নারীবিশ্বে এক অন্যরকম অভিধায় চিহ্নিত। যেহেতু মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বিলুপ্তির পরে পুরুষই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়। ফলে পুরুষ তাদের সুবিধা অনুসারে নিয়মনীতি চালু করে। নারী বন্দী হয় চার দেয়ালের কঠিন শৃঙ্খলে। কুসংস্কার, অশিক্ষা, ধর্মের বেড়াজাল, এবং যাবতীয় কূপমণ্ডকতার আবরণে নারী ক্ষতবিক্ষত হতে হতে দিন দিন পুরুষতন্ত্রের যাতাকলে পিষ্ট হয়। কালের পরিবর্তনে, যুগের চাহিদায় ক্রমে ক্রমে নারী এই কঠিন প্রাচীর ভেদ করে বেরিয়ে আসলেও নির্যাতন আর সহিংসতা কিন্তু কমেনি, বরং বেড়েছে অনেক বেশি। বাল্যবিয়ে, যৌতুক, স্বামী ও স্বামীর পরিবার কর্তৃক দমনপীড়ননির্যাতন ছাড়াও নারী ধর্ষণ এখন এক চরম আকার ধারণ করেছে। ধর্ষকের বিচার তো দীর্ঘসূত্রতার কারণে হয়ই না, অন্যদিকে ধর্ষিতা নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথাও কেউই চিন্তা করেন না। গতদিন কয়েক আগে এই বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক এক গোল টেবিল আলোচনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। নারী নেত্রীবৃন্দ ছাড়াও এই আলোচনায় নতুন প্রজন্মের কিছু নারী ও পুরুষ বক্তা অত্যন্ত সময়োপযোগী, আধুনিক এবং মনস্তাত্ত্বিক পদক্ষেপ এবং করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তবে আয়োজকদের পক্ষ থেকে শুরুতেই যে ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, তাতে সংক্ষেপে পুরো বিষয়টিকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়।

বিশেষ করে ভিকটিম নারীকে কীভাবে মানসিক সহায়তা দেয়া দরকার, তা বিভিন্ন স্ব স্ব অবস্থান এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেন। কন্যাশিশু আর নারী এদের সাথে কি ধরনের আচরণ করা উচিত, একজন কন্যার সাথে পিতামাতার কি ধরনের সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন, মেয়ে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবককে কি পরিমাণ সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি, সেইসব কথা এই আলোচনায় অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও সরস আলাপচারিতায় প্রাধান্য পায়। আর এই কথাগুলোকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে গণমাধ্যম কর্মীদের কঠোর ও জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়। প্রিন্ট,ইলেক্ট্রনিক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্য দিয়েই এই বিষয়ে গণজাগরণ সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বক্তারা বলেন, পরিবার থেকেই প্রথমে সচেতনতা শুরু করতে হবে। শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে, কোন কোন পর্যায়ে সে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হতে পারে। আর কোনো লুকাছাপা নয়, সবকিছুই প্রকাশ করতে হবে, প্রতিরোধ করার বিষয়েও তাকে সম্যক জ্ঞান দিতে হবে। শিশুর প্রতি সহিংসতা, শারীরিকভাবে লাঞ্চনার বিযয়গুলোকে প্রাাথমিক স্কুলিংএর আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছে। মোটকথা এইসব বিষয় লোকলজ্জার ভয়ে কেউ আলাপ করতে চায় না। তাই এই বিষয়গুলোকে গণ মাধ্যমে বেশি বেশি করে তুলে ধরার কথা বলেন। নির্যাতিত নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেবা ছাড়াও আর কি কি সহায়তা দেয়া দরকার সেগুলোও লেখালেখির মধ্য দিয়ে নিয়মিত প্রচার আর প্রসারের কথাও বলা হয়। আর এসব ঘটনা প্রকাশের যেভাষা, তা যেন শালীন হয়, লিখতে গিয়ে ভিকটিম যেনো বারেবারে নির্যাতিত না হয়, সেবিষয়টিতে গণমাধ্যম কর্মীদের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়।

নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে এই ধরনের আয়োজন অত্যাবশ্যক। শুধু আলোচনা নয়, আইনগুলোর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা এখন সময়ের দাবি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযৌন সহিংসতার ধরন এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সচেতনতা
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়া সহকারী প্রধান শিক্ষক পরিষদের সংবর্ধনা