নির্মাণের চার বছরেই দেবে গেছে সেতু, দুর্নীতির অভিযোগ

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | শনিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে মাত্র চার বছর আগে চেঙ্গী নদীর উপর নির্মাণ করা একটি সেতু দেবে গেছে। সমপ্রতি বন্যায় পাহাড়ি ঢলে সেতুটির একটা স্প্যান দেবে গেছে। উপজেলা সদরের সুরেন্দ্র মাস্টার পাড়া যাওয়ার জন্য নির্মিত সেতুটিতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধে নোটিশ দিয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে ব্রিজের একটা স্প্যান দেবে যাওয়ায় বিস্মিত স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগনিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই ব্রিজের স্প্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা যায়, সুরেন্দ্র মাস্টার পাড়াসহ আশপাশে কয়েটি গ্রামে যাতায়াতের জন্য সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ২০১৭১৮ অর্থ বছরে শুরু হওয়া সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৮০ লাখ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষে ২০২০ সালের মার্চে সেতুর উদ্বোধন করে তৎকালীন সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। উদ্বোধনের পর ৪ বছর পার হতেই ব্রিজের একটা স্প্যান দেবে যান চলাচল বন্ধে সর্তকীকরণ সাইনবোর্ড দেয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। সরেজমিনে সুরেন্দ্র মাস্টার পাড়ায় গেলে স্থানীয়রা ব্রিজের নির্মাণ ত্রুটি নিয়ে কথা বলে। ইজিবাইক চালক রূপায়ন চাকমা বলেন, নির্মাণের সময় আমরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। তখন অনেক নিম্নমানের কাজ হয়েছে। কিন্ত আমাদের কিচ্ছু বলার ছিল না। এখন ব্রিজ তো দেবে গেছে। ব্রিজ নিমার্ণের সময় অনেক অনিয়ম হয়েছে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বুদ্ধ লাল চাকমা জানান, ব্রিজের উপর অনেকগুলো গ্রামের মানুষ চলাচল করে। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্রিজের স্প্যান দেবে গেছে।

ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। মুনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী উমেশ ও হৃদয় ত্রিপুরা বলেন, আগে আমরা নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতাম। চার বছর আগে সেতু নির্মিত হওয়ার পর ইজিবাইকে করে স্কুলে যাতায়াত করতাম। এখন গাড়ি চলাচল বন্ধ। ভেঙে যাওয়ার ভয়ে কোন গাড়ি বা ইজিবাইক পারাপার করে না। পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে।

সুরেন্দ্র মাস্টার পাড়ার দোকানি রিয়া ত্রিপুরা বলেন, ১০ গ্রামের মানুষ সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করে। কৃষি পণ্যসহ বিভিন্ন কিছু গাড়িতে করে পরিবহন করা হত। বন্যার সময় সেতুর একটা স্প্যান দেবে যাওয়ায় গাড়ি আর পারাপার করতে পারে না। মাথায় করে মালামাল পরিবহন করতে হয়।

সেতু নিমার্ণের ঠিকাদার কৈলাশ ত্রিপুরার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সেতুর নির্মাণ কাজের সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন জীবন রোয়াজা। তিনি বর্তমানে চাকরি থেকে অবসরে রয়েছেন। জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার হালদার বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে ব্রিজের একটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নির্মাণের সময় কোনো অনিয়ম হয়নি। নিম্নমানের কোনো সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে সেতুটি মেরামত করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে ফিরলেন আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া আরও ২৬ বাংলাদেশি
পরবর্তী নিবন্ধগণঅভ্যুত্থানে ‘শহীদের’ তালিকা যাচাইয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি