নির্বাচিত সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয় : তারেক রহমান

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১ মার্চ, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

সনাতনীদের যাতে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারী সরকারের সময় গত দুই দশকে দেশের সংখ্যালঘু সমপ্রদায় বা তাদের স্থাপনা ও বসতবাড়িতে হামলার ঘটনাগুলো যদি পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব হাতেগোনা দু’একটি ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশের সংখ্যালঘু কেন্দ্রিক হামলার ঘটনা কোনো ধর্মীয় কারণে হয়নি। প্রত্যেকটি ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে। এসব হামলা ছিল অবৈধ, লোভলাভের জন্য দুর্বলের ওপর সবলের হামলা কিংবা অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। সেজন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান, আপনাদের ধর্মীয় পরিচয়কে আর কেউ যাতে নিজেদের হীন স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে। সে ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরের জেএমসেন হলে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্য দেন, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।

তারেক রহমান বলেন, গত ১৭ বছর বাংলাদেশে কংসের মতো এক নৃশংস স্বৈরাচার জনগণের ওপর জাগ্রত পাথরের মতো চেপে বসেছিল। দলমত, বর্ণ নির্বিশেষে গণতন্ত্রকামী বীর জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্টের বাংলাদেশ ছেড়ে পালায় সেই কংসরূপী নৃশংস গণহত্যাকারী স্বৈরাচার। স্বৈরাচার পালালেও গণতন্ত্র কিন্তু এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ক্রমাগত অব্যাহত রয়েছে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসর নানা কৌশলে পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টায় প্রতিনিয়ত লিপ্ত। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সংসদ ও সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত গঠিত হবে ততদিন পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়।

তারেক রহমান বলেন, আপনারা আমাকে যে আমন্ত্রণ পত্র দিয়েছেন, সেখানে লেখা ছিল, গত ১৭ বছর ধরে সংগঠনটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ সনাতনীরা সেটা এখন বুঝতে পেরেছে। নতুনভাবে এ সংগঠনকে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই যে রাজনৈতিকভাবে আপনাদের ব্যবহার করা হয়েছে এ গভীর সত্যটি আপনারা যদি বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই এটা আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি। তারেক রহমান বলেন, আমাদের সকলেরই জেনে রাখা প্রয়োজন রাষ্ট্র এবং সমাজে নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে কোনো দলীয় পরিচয়ে আবদ্ধ থাকা কারও জন্য জরুরি নয়। পলাতক যে স্বৈরাচারের শাসনামল ছিল সে আমলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যাদেরকে আয়নাঘরের নির্জন জায়গায় মৃত্যুআতঙ্কে কাটাতে হয়েছে, সবাই কিন্তু সংখ্যাগুরু সদস্য। কিন্তু এ পরিচয় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রে যদি আইনের শাসন না থাকে তাহলে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু কেউ নিরাপদ নন। একমাত্র আইনের শাসন সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা একটি ক্রসরুটে দাঁড়িয়ে আছি। এটা আমাদের অতিক্রম করতে হবে। এটা অতিক্রম কোনো একটি গোষ্ঠী বা ধর্ম দ্বারা হবে না। এটার অতিক্রম আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালানোর পরে দেশে যখন চরম বিভক্তি, অস্থিতিশীলতা ও আনন্দ একসঙ্গে বিরাজ করছিল, তখন সহনশীলতার প্রশ্ন আসছিল, পরাজতি শক্তির ওপর আক্রমণের কথা আসছিল। তখন তারেক রহমান সাহেবের এক বক্তব্যে দেশের মানুষ একটি দিক পেয়েছিল, এক হয়েছিল। পরিস্থিতি তারপর ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হওয়া শুরু করে।

খসরু নেতা বলেন, বিএনপির যে রেইনবো নেশন ভাবনা, সেটা হচ্ছে রঙধনুতে অনেকগুলো কালার থাকে। সব কালার মিলেই কিন্তু রঙধনু। রেইনবো নেশনের কনসেপ্ট হচ্ছে আমাদের সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ। আমি বলতে চাই, আগামীতে সকল ধর্ম, বর্ণের ঐতিহাসিক কৃষ্টিসহ সবকিছুতে আগামী সরকার তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিনিয়োগ করব, যাতে প্রত্যেকটি জাতি ও ধর্ম যার যার অবস্থান থেকে সবকিছু সংরক্ষণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারি। বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন২০৩০ এ স্পষ্ট বলা আছে সবার কালচার, ইতিহাস ও ভাষাকে সংরক্ষণ করতে হবে। সেটাকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি হলফ করে বলছি, গত বছরের ৫ আগস্টের পর কোনো সনাতনী ভাই লাঞ্চনা বা হামলার শিকার হননি। আপনারা আমাদের সম্পত্তি নন, আমাদের সম্পদ। গত ১৬ বছর ধরে যারা আপনাদের সম্পত্তি বানিয়ে ক্ষমতার গদিতে বসেছিল তারাই আপনাদের নির্যাতন করেছে। আমরা বিএনপি সবসময় বলি, সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলতে কিছু নেই। আমরাআপনারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আপনাদের ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে।

জম্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান প্রদীপ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও বিপ্লব পার্থের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব আর কে দাশ রুপু, স্বামী উমেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ, দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, তারণনিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, স্বামী যোগানন্দ গিরি মহারাজ, স্বামী বেদানন্দ গিরি মহারাজ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সহকারী মহাসচিব বিশ্বজিৎ দত্ত বাবু, সঞ্জয় চক্রবর্তী মানিক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, অভয়মিত্র মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৌরভ প্রিয় পাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখেজুরের আমদানি দ্বিগুণ, কমছে দাম
পরবর্তী নিবন্ধদরপত্র কিনেও জমা দেয়নি কোনো বিদেশি কোম্পানি