বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোস করছে অভিযোগ করে জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রোববার বিকালে রাজধানী ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরে জনগণ যাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল তারাও আজ ফ্যাসিবাদের সাথে আপোস করছে। দেশকে ফ্যাসিবাদের কবল মুক্ত করতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে, যারা তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায় তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। প্রধান উপদেষ্টা ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, আগে সংস্কার ও বিচার তারপর নির্বাচন। আমরাও তাই বলতেছি। খবর বিডিনিউজের।
সংস্কার–বিচার না করে এবং জুলাই ঘোষণা ও সনদ বাস্তবায়ন না করে যারা নির্বাচন চায় তারা মূলত ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায় বলে মন্তব্য করেন জামায়েতের নায়েবে আমির। আর যাতে ফ্যাসিবাদ ক্ষমতায় আসতে না পারে সে কারণেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, আইনসভার দু কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৭১ ভাগ লোক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। দেশের জনগণ জুলাই ঘোষণা ও সনদের আইনি ভিত্তি চায় এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন দিতে হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে জুলাই সনদ ও ঘোষণাকে আইনি মর্যাদা দিতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তাহের বলেন, আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করেন, গোলটেবিল বৈঠক করেন; তারপর দেখেন জনগণ কী চায়। জুলাই সনদ ও ঘোষণা রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমেই আইনি ভিত্তি প্রদান করা সম্ভব। জনগণের দাবি আদায় করার জন্য তিনি সকল ইসলামপন্থি ও গণতান্ত্রিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
সেমিনারে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই ঘোষণা অসম্পূর্ণ। রাজনৈতিক দল এবং জনগণের দাবি অনুযায়ী জুলাই ঘোষণাকে পূর্ণাঙ্গতা দান করতে হবে এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জুলাই ঘোষণা ও সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়া না হলে পরবর্তীতে যে সরকার আসবে তারা তা মানবে না। ইতোমধ্যে একটি দলের নেতা বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে সবকিছু মুছে ফেলবেন। তিনিও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগে সবার জন্য সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপি ৯১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেনি। ৯৬ সালে একতরফা নির্বাচন করেছিল। প্রধান উপদেষ্টা যে জুলাই ঘোষণা পেশ করেছেন তা আশাব্যঞ্জক নয়। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। পুরনো সংবিধান রেখে ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যাবে না।