নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি পলাতক ফ্যাসিবাদীদের শক্তিশালী করবে

শিক্ষক সমাবেশে তারেক রহমান । তরুণরা নতুন দল করলে বিএনপি স্বাগত জানাবে, তবে পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ

| রবিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি পলাতক ফ্যাসিবাদীদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান। নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীতে এক শিক্ষক সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আগেও আমি বলেছি, আজও আমি আপনাদের সামনে আবারো তুলে ধরতে চাই, বলছি, নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান কার্যকরী হাতিয়ার। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এ শিক্ষক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন তারেক রহমান। এতে সারাদেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক অংশ নেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি বরাবরের মতই আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছড়ানো কিংবা বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার লিপ্ত হওয়ার সুযোগ না পায় সে বিষয়ে অবশ্যই আপনাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না, ইনশাল্লাহ। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে মাফিয়াপ্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিংবা বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অযাচিত ভুল বোঝাবুঝির কারণে যাতে একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখীন না হয় এ ব্যাপারে আমাদের সবাই অত্যন্ত সর্তক থাকতে হবে।

নির্বাচন ও সংস্কার দুটোই জরুরি : তারেক রহমান বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন বিএনপি দুইটারই পক্ষে, দুটোই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার না কি নির্বাচন? কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কূট তর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখি তাহলে কিন্তু সেটি ভিন্ন। দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অপরদিকে জনগণের চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানোই অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নিরব হাহাকার।

জনগণের নিত্যদিনের দুঃখদুদর্শা লাগব, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তবর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণ বিশ্বাস করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মত সর্বজন সমর্থিত একটি নির্দলীয় অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়া সহজ। তাহলে এখন প্রশ্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এতদিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। জনগণের ওপরে কেন উল্টো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এখনও কেন বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক তাহলে কী সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী না কি সরকার পারছে না। অন্তবর্তীকালীন সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও তাদের ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তরুণরা নতুন দল করলে বিএনপি স্বাগত জানাবে : তারেক রহমান বলেন, দেশের ছাত্রতরুণরা রাষ্ট্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এসব তরুণরাই গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত এসব তরুণদের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়, পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক, বলেন তিনি।

ভুল বোঝাবুঝি সময়ের অপচয় : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই সরকারের সাথে কোনো ভুল বোঝাবুঝি অযথা কুট তর্ক আমি সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে একই সাথে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মানতে পারে, মেনে নিতে পারে তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকার জরুরি বলে আমরা মনে করি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় শিক্ষকদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষককর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। শিক্ষকদের প্রাপ্য অধিকার বাস্তবায়নে বিএনপির ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে বলেও তারেক রহমান তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম ও আফরোজা খানম রীতা, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলন উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধআরেকটি শক্তি দিল্লির তাবেদারি করার পথে হাঁটছে : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন