নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, এখানে কোনো চাপ নেই

চট্টগ্রামে মতবিনিময় সভায় সিইসি সরকার বা আদালত নিষিদ্ধ না করলে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই আ. লীগের

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

সরকার বা আদালত যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করেন, তাহলে দলটির নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। কমিশনের ওপর কোনো চাপ নেই। গত নির্বাচনের মতো বহিঃশক্তি নির্বাচন কমিশনে চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। তিনি গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এটাও শোনা যাচ্ছে যে, কেউ কেউ মামলা করেছে কোর্টে। এ দল যাতে নির্বাচনে না আসতে পারে, সেটার আদেশ চেয়ে। কোর্ট যদি রায় দেন, যেভাবে রায় দেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেব। আর না হলে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকার বা আদালত কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে ‘বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই’। সরকার যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করে, আমরা তাদের রেজিস্ট্রেশন তো বাতিল করতে পারি না। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অথবা কোর্টের সিদ্ধান্ত। আমরা এ দুটোর দিকে চেয়ে আছি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। দল করার শাসনতান্ত্রিক অধিকার সবারই আছে। কোনো দল রেজিস্ট্রেশন পাবে কি পাবে না সেটার আলাদা বিধি বিধান আছে। কোনো দল শর্ত পূরণ করলে আমরা (নিবন্ধন) দেব। শর্ত পূরণ না করলে দেব না। পুরানো যে দলের কথা বলছেন, এরা কিন্তু বহু আগে রেজিস্টার্ড।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আওয়ামী লীগ তো আমাদের এখানে একটা রেজিস্টার্ড দল, বিধি বিধান অনুযায়ী। নির্বাচন করা না করার সিদ্ধান্ত মূলত তাদের। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয়– ‘আমরা নির্বাচন করবে না’, আমরা তো জোর করে করাতে পারব না। যদি ওরা (ভোট করার) সিদ্ধান্ত নেয় এবং যদি রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত (নিষেধাজ্ঞা) না নেয় বা কোর্ট থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে, উই আর আনডান। এটা আমরা ইনহেরিট করেছি। আমরা দিই নাই। অলরেডি ৭২ সালের পর থেকে উনারা রেজিস্টার্ড অবস্থায় আছে। আমরা তো আর বাদ দিতে পারি না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিগত ১৫ বা ১৬ বছর ধরে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জেল জুলুম ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ভোটের অধিকারের কথা বলেছেন। এছাড়া আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা সকলের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। সুতরাং এ প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই আমাদের এগোতে হবে। এবার আর আগের মতো ভোট হবে না। সেটার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ৯১, ৯৬ ও ২০০১ এর মত যাতে নির্বাচন করতে পারি। তিনি বলেন, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর নির্বাচন আপনারা দেখেছেন। গত তিনটা নির্বাচন কেমন হয়েছে আপনারাও জানেন, আমরাও বুঝি। এখন সেই পরিস্থিতি নাই। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় আগামীতে একানব্বই, ছিয়ানব্বই ও ২০০১ এর মত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।

নির্বাচন কমিশন ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’ দাবি করে সিইসি বলেন, এখানে ডানে বামে উপরে নিচে কোনো চাপ নেই। আমরা শুধু এখন বিবেকের চাপে আছি। আইন কানুন, শাসনতন্ত্র, বিধি বিধানের মধ্যে কাজ করার যে চাপ সেটুকুর মধ্যে আছি। অন্য কোনো বহিঃশক্তির চাপ আমাদের ওপর নাই। যেটা আগের তিনটা কমিশনের উপরে ছিল। এদেশে ভালো ইলেকশন করা সম্ভব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, আগের নির্বাচন কমিশনের কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা তারা ভাবছেন না। আমাদের এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নেই। রিফরমস কমিশন কী সুপারিশ দেয়, দেখে সিদ্ধান্ত জানাব।

সিইসি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলাম। নির্বাচনী প্রস্তুতির মাঠ পর্যায়ের সার্বিক কার্যক্রমও এখান থেকে শুরু হবে। আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে, আইন অনুযায়ী মার্চে সম্পন্ন করব। এটাকে আরও সংশোধন করার জন্য পরবর্তীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাটা সংগ্রহ করবো। এজন্য মাঠ পর্যায়ে মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। নির্বাচন বা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে মানুষ কেন অসন্তুষ্ট, কি ব্যবস্থা নিলে কমিশনের উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, অসন্তুষ্টি দূর করা যায় সে বিষয়ে মতামত নেয়া হবে। ইভিএম’র প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, মহিলারা ভোটার হওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনা। অনেকে মনে করে আমার ভোট অন্য জনে দিয়ে দেবে, নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে কি হবে, তাই ভোটার হয়ে কি আর হবে। এ জন্য ভোট নিয়ে মানুষ আস্থা হারায়। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবো, এটা আমাদের টার্গেট। মানুষ ভোটার হওয়ার জন্য এখানে গণমাধ্যমেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করার বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যে আলোচনা চলছে সেই ব্যাপারে সাংবাদিকরা সিইসির বক্তব্য জানতে চাইলে জবাবে সিইসি বলেন, ১৭ বছর করা যাবে না আমরা বলি নাই। সংবিধান আবার সংশোধন করতে হবে। সংবিধানে তো বলা আছে ১৮ বছর। যদি সংবিধান পরিবর্তন করে ১৭ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়, আমরা সেভাবে কাজ করব। আমরা সংবিধান অনুযায়ী চলি। অন্য কারো নির্দেশনায় চলি না। সংবিধানে যদি পরিবর্তন আসে ১৭ বছর বয়সে ভোটার হবার যোগ্যতা রেখে, তাহলে আরপিও সংশোধন করতে হবে। ভোটার তালিকা আইনে সংশোধনী আনতে হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইনে আছে প্রত্যেক বছর জানুয়ারির ১ তারিখে যাদের ১৮ বছর হবে, তাদের অর্ন্তভুক্ত করে ২ তারিখে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। মার্চের ২ তারিখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হয়ে যাবে। শিডিউল করার আগ পর্যন্ত এটা সংশোধন করা যায়। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনেক ফেইক ভোটার আছে এখানে। অনেক বিদেশি ভোটার হয়ে গেছে এখানে। অনেক ভোটার মারা গেছে। মৃত ভোটার রয়ে গেছে। কিন্তু নাম কাটা যায়নি। ওটা বাদ দিতে চাই।

তিনি বলেন, ইলেকটোরাল প্রসেসের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। অনেকে মনে করে ভোটার হয়ে কী হবে। ভোট তো কেউ না কেউ দিয়ে দিবে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। বাড়ি বাড়ি যাব। টার্গেট হচ্ছে মাস ছয়েকের মধ্যে বাড়ি বাড়ি যাবার কাজ শেষ করব। বিগত তিনটা নির্বাচনে যারা দিনের ভোট রাতে করেছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনাএ প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি না। এটি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বা সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।

নতুন এনআইডি আবেদন, এনআইডি সংশোধন ও এনআইডি পাওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপণের বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ আসে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ভোটার নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে মানুষের দুর্ভোগ কিভাবে লাঘব করা যায় সেগুলোর সার্বিক বিষয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ চেয়ে দিকনির্দেশনা দেবো।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. নোমান হোসেন, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদসহ কঙবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার নির্বাচন কর্মকর্তাগণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুলাই ঘোষণাপত্র সরকারই দেবে, সমর্থনে কর্মসূচিও হবে : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন
পরবর্তী নিবন্ধইতিহাস সৃষ্টি করা ২০২৪ বিদায় নিচ্ছে আজ