আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন গতকাল বুধবার তার দপ্তর থেকে এ চিঠি দেওয়া হল। আর এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানোর আনুষ্ঠানিকতা সারা হল। এখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন তারিখসহ তফসিল ঘোষণা করবে। ডিসেম্বরের শেষার্ধে এই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইতোমধ্যে ইংগিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। খবর বিডিনিউজের।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এরপর গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন নিয়ে ইসির প্রস্তুতি তুলে ধরে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গতকালকে তো একটা ঘোষণা দিয়েছেন। উনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রমজানের আগে ইলেকশন করার জন্য আমাদেরকে একটা চিঠি দেবেন, আমি প্রত্যাশা করছি দ্রুত চিঠিটা পেয়ে যাব। তিনি বলেন, চিঠি না পেলেও আমাদের তো এটা বিভিন্ন দিন নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনায় ছিল ইলেকশনের তারিখ নিয়ে। আমাদের প্রস্তুতি আমরা অনেক আগের থেকে নিচ্ছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছি ইনশআল্লাহ। আমাদের কোন প্রস্তুতিতে ঘাটতি হবে না।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের জন্য ডিসেম্বরের শেষার্ধে তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দেন সিইসি। তিনি বলেন, ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেদিন পোলিং ডেট হবে, তার দুই মাস আগে তফসিল হবে। আগে চিঠিটা পেয়ে নিই। বললাম তো যেদিন আমরা পোলিং ডেট ঠিক করব।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে সিইসিকে অনুরোধ করেছেন। জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের কথা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূস অবিলম্বে এক্ষেত্রে সকল প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরুর কথা বলেছেন। বিগত পনের বছরে নাগরিকদের ভোট দিতে না পারার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন যেন মহা–আনন্দের ভোট উৎসবের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়, তেমন আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে নির্বাচন আনন্দ–উৎসবে, শান্তি–শৃঙ্খলায়, ভোটার উপস্থিতিতে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতায় অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠার যে প্রত্যাশা রেখেছেন, সে কথা চিঠিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, নির্বাচন আয়োজনে যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি একটি প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যয় জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।
শেষে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ভিত্তিতে ওই সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব।