নির্বাচনে জনআস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

| সোমবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন গতকাল শপথ গ্রহণ করলেন। নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন যাঁরা, তাঁরা হলেন- সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শনিবার তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। এরপরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নিয়োগ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্ল্লেখ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো। নির্বাচন কমিশন আইনের অধীনে গঠিত এটিই প্রথম কমিশন।
দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যক্তিগতভাবে প্রতিক্রিয়া দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নির্বাচন কমিশনারগণ। তাঁরা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করবেন বলে জানান। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তাঁরা। কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিয়েছেন। ওইদিন থেকে এ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদ শূন্য রয়েছে। নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা শপথ গ্রহণ শেষে ওই পদে অধিষ্ঠিত হলেন। তাদের পাঁচ বছর মেয়াদে আগামী জাতীয় সংসদসহ সব স্তরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো গত ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন পাশ হয়। ওই আইনের আলোকেই আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি।
নতুন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতৃবৃন্দ বলছেন, দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে বলেও প্রত্যাশা দলটির। নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এটা খুব সহজ কাজ নয়। সারা বিশ্বেই এটা চ্যালেঞ্জের কাজ। তবে আমরা আশা করি, নতুন নির্বাচন কমিশন তাদের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হবে। দেশ ও দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, ভোটের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ফেরানোই নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তাঁদের মতে, বিদায়ী কমিশনের নেতৃত্বে গত ৫ বছরে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে যে ভোট হয়েছে- তাতে মানুষের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বরং অনেক জায়গায় ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের ভোটের প্রতি এক ধরণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নবগঠিত ইসির প্রথম কাজ হবে মানুষের আস্থা ফেরানো।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দাবি, সরকারের অনুগত লোক দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, এটা আরেকটি হুদা কমিশন। এসব নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। শেখ হাসিনার সরকার বা তাদের করা কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।
এদিকে, নিজের দেওয়া তালিকা থেকে নতুন সিইসি (কাজী হাবিবুল আউয়াল) বেছে নেওয়ায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার একটা ভালো কাজ করল। এখন সরকার যদি তাকে (নতুন সিইসি) বিরক্ত না করে, তাকে যদি তার মতো করে চলতে দেয়, তাহলে তিনি খারাপ করবেন না। তার অনেক সাহসী গুণাবলী আছে।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, অবিতর্কিত, সততা ও সুনাম নিরূপণের মানদণ্ড নেই। গোটা ব্যাপারটিই আপেক্ষিক। একপক্ষের কাছে যিনি নিরপেক্ষ, আরেকপক্ষের কাছে তিনিই পক্ষপাতদুষ্ট। বর্তমানে দেশের মানুষের নির্বাচনের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে কাজ করবে নতুন কমিশন- এমনটাই আশা করছেন সকলেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নানা কারণে ভেঙে পড়েছে। এই ভেঙে পড়া ইসিকে পুনর্গঠন, পুনর্বিন্যাস করে এবং নির্বাচনের প্রতি জনআস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হন- তাহলে ফলাফল কারও জন্যই সুখকর হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে