নির্বাচনের নামে সরকার ‘অনির্বাচিত প্রতিনিধি’ বাছাই করছে

সংবাদ সম্মেলনে খসরু ।। বিএনপির প্রার্থীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

সরকার নির্বাচনের নামে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ‘অনির্বাচিত প্রতিনিধি’ বাছাইয়ের পন্থা অবলম্বন করছে বলে মনে করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অনির্বাচিত লোক যখন ক্ষমতায় যাবে, সিটি কর্পোরেশন দখল করবে, তখন কী হবে ভেবে দেখেন। অনির্বাচিত লোক যেখানে যাবে সেখান থেকে জনগণ ও দেশ কী পাবে? সুতরাং ভেবে দেখতে হবে। এসময় তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন, এমন নির্বাচনের অর্থ কী? প্রহসনের নির্বাচনের প্রয়োজন আছে? বাসায় বাসায় গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে। এভাবে চললে বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন হবে কিনা সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো নির্বাচন গ্রহণ করবে কিনা সন্দেহ আছে। লক্ষ্য করুন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
গতকাল সকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আমীর খসরু। চসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রধান এ সমন্বয়কারী বলেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য প্রতিপক্ষ যে প্রক্রিয়াগুলো নিচ্ছে তা সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী। এর একটি হল- তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুরোপুরি ব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী গত ২-৩ দিন ধরে পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে পুলিশ। ২০-৩০ জনের গ্রুপ গিয়ে বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করছে, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে, এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলছে। যেখানে নেতাকর্মীরা অনুপস্থিত সেখানে তাদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের হেনস্থা করছে। শুধু তাই নয় ‘রেজিম’র সন্ত্রাসীরা যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাতে সহযোগিতা করছে।
আমীর খসরু বলেন, আমাদের সিনিয়র নেতা যারা আছে, সবার বাসায় পুলিশ গেছে। গতকাল (বুধবার) একদিনে প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম শহরকে তছনছ করে ফেলেছে। প্রায় প্রত্যেকটা কাউন্সিলর প্রার্থীর বাড়ি গিয়ে ধমক দিচ্ছে। প্রার্থীকে বলছে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। তিনি বলেন, আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হচ্ছে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা, সবাইকে সমান চোখে দেখা, সুন্দর-সুচারু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তার বিপরীতে তারা নির্বাচন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। পদে পদে নির্বাচন যাতে সফল ও গ্রহণযোগ্য হতে না পারে তার জন্য কাজ করছে। দুঃখের বিষয় তারা সংবিধানের বিরোধিতা করছে। যে সংবিধানে পরিষ্কার বলা আছে, জনগণের প্রতিনিধি দেশ পরিচালনা করবে। জনগণের প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার পরিচালন করবে। তারা সে পথটা বন্ধ করে দিতে চায়। এমন প্রেক্ষাপটেও আমরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আগামী যে কয় দিন আছে, সেই দিনগুলো কিভাবে কাটবে, তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। বুধবারও নির্বাচনী কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসীরা’ হামলা করেছে। প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে। বোমাবাজি করেছে। আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছে। আমীর খসরু বলেন, তারা এমন একটি নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যাতে মানুষ নির্বাচনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, ভোটকেন্দ্রে না যায়। গেলেও তাদের নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পুরো নির্বাচন চলে। এ নির্বাচনের তো প্রয়োজনীয়তা নেই। যাদের সংবিধান, জনগণের ভোট, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা, তারা যদি সেই পথটা বন্ধ করে দিতে চায়, তাহলে তো নির্বাচনের নামে প্রহসন করে কোনো লাভ নেই। এই নির্বাচনের তো আর কোনো প্রয়োজন নেই, এই নির্বাচনের অর্থ কি? যারা ক্ষমতা দখল করতে পারে, দেশ দখল করতে পারে তাদের কাছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কি কোনো দরকার আছে?’
তিনি বলেন, যে ভোট চুরি করে এবং যার ভোট চুরি করে সবাই জানে। সাংবাদিকরাও জানে। দেশে-বিদেশে যারা নির্বাচন নিয়ে কাজ করে তারাও জানে। সমগ্র বিশ্ব জানে, বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে একটি দানব সৃষ্টি করেছে। যে দানব ভয়ভীতির মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, কাট্টলীতে ২০-৩০ হাজার লোকের মিছিল হয়েছে বিএনপির। রাতের মধ্যে ১০ জনকে তুলে নেওয়া হল। মিছিল কেন করল এটাই অপরাধ। যেখানে গণজোয়ার হবে সেখানেই রাতে তল্লাশি হবে গ্রেপ্তার হবে। যারা বিএনপির জন্য কাজ করবে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বাসায় হানা দিবে। মামলা দিবে। কতগুলো মামলা হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলক। কোনো ঘটনা হয়নি কিন্তু তারা ম্যানুফেকচার করছে। কারো সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে সাজিয়ে মামলা করে ফেলছে। অথচ তারা আক্রমণ করছে। চট্টগ্রাম মহনগরীতে বিএনপির মিছিলে হামলা করছে।
শেষপর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে থাকবে কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, আমরা এখনও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের মানুষ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য নির্বাচনে যাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু থাকুক। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অনির্বাচিত সরকার ও তাবেদার নির্বাচন কমিশনারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নাগরিকদের ইচ্ছে, প্রত্যাশা ও প্রতিনিধি বাছাইয়ের একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন। বড় দল হিসেবে জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ নির্বাচন চায় না। তারা নির্বাচনকে প্রতিরোধ করতে চায়। ভোটাররা যে নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু তারা চায় না। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার যত পথ সবকটি তারা বেছে নিয়েছে। সে পথ বেছে নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এবং বিএনপি নেতকার্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। বিরোধী দলের উপর চরম আঘাত হানছে।
‘বিএনপি নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চায়’, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন বিতর্কিত করার প্রয়োজন কি বিএনপির আছে? নির্বাচন বির্তকিত হওয়ার কি আর কিছু বাকি আছে বাংলাদেশে? ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে, এখন পর্যন্ত নির্বাচন বির্ততিক হওয়ার আর কিছু বাকি আছে? বিএনপি হামলা করেছে, আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি হামলা করতে পারে? এটা বিশ্বাস করেন? কোনো লোক বিশ্বাস করবে বিএনপি হামলা করতে পারে? যেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়িঘরে থাকতে পারছে না সেখানে হামলা করবে?
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনে কী হচ্ছে তা নিয়ে লিখেন। সোচ্চার হউন। কারণ দিন শেষে কেউ রক্ষা পাবেন না। অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকের চাকরি চলে গেছে। আওয়ামী লীগ চায় না মিডিয়া ভালোভাবে কাজ করুক। যারা তাদের পক্ষে কাজ করে তাদের ছাড়া অন্য মিডিয়া কাজ করুক সেটা তারা চায় না। এসময় তিনি বলেন, অনেকে সাংবাদিকতা করছে না। তারা নির্দেশিত ম্যানেজারের কাজ করছে, কেরানির কাজ করছে। কাজ করতে দিচ্ছে না তো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এস এম সাইফুল আলম, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, চাকসুর সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, হারুন জামান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, গাজী সিরাজ উল্লাহ, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, কামরুল ইসলাম।
বাড়ি তল্লাশীর তথ্য : সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ২০ জানুয়ারি রাতে নাসিমন ভবনস্থ বিএনপির দলীয় ও মেয়র প্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেনের নির্বাচনের প্রধান কার্যালয়ে পরিকল্পিত ভাবে আওয়ামী ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়েছে এবং মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ও আবু সুফিয়ানের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। একইদিন সন্ধ্যায় খাজা রোড বলির হাট ধানের শীষের গণসংযোগে হামলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, শফিকুর রহমান স্বপন, মেয়র প্রার্থীর মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মো. ইদ্রিস আলী, বিএনপি নেতা মনজুর আলম মনজু, জাকির হোসেন, মোহাম্মদ আলী সাকী, এম এ গফুর বাবুল, উত্তর পাঠানটুলি ওর্য়াডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মহসিন, যুবদলের নয়ন, সামিউল, ইউসুফ, বাদশা মিয়া, হালিম, ইলিয়াছ, সিরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ তল্লাশী চালিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার ভূমি অফিসের তহসিলদার গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমেঘনা পেট্রোলিয়ামের অনিয়ম তদন্তে বিপিসি