নির্বাচনের কথা বলাকে হস্তক্ষেপ মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র

| বুধবার , ১২ জুলাই, ২০২৩ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সমালোচনা করে রাশিয়া, চীন ও ইরানের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলাকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করে না তারা।

সোমবার রাতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, এর আগেও আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছি, অন্য কোনো দেশ যখন আমাদের (আমেরিকার) নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে তুলে ধরে, তখন আমরা সেটাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করি না। আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার সুযোগ হিসাবে আমরা সেই আলোচনাকে স্বাগত জানাই, এবং আমরা জানি না অন্য কোনো দেশ কেন আপত্তি করবে। খবর বিডিনিউজের।

যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না তারা। বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ছয় সদস্য। এরপর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যও বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়ে ইইউর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি জোসেফ বোরেলকে চিঠি দিয়েছেন।

এ বিষয়টিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সম্প্রতি বলেন, এটা নব্যউপনিবেশবাদ এবং সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের আরও একটি অপচেষ্টা।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির এক অনুষ্ঠানেও সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে ‘হস্তক্ষেপ করছে’ যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে জুন মাসে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব ব্যবস্থা, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার মৌলিক নিয়মগুলোকে সমুন্নত রেখ এবং অভিন্ন ভবিষ্যৎমুখী একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গড়ে তুলতে সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও অন্য সব দেশের সাথে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।

এসব প্রসঙ্গ ধরে সোমবার পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হলে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমাদের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহ্বানে কেউ আপত্তি তুলবে কেন আমি জানি না। আমি বলতে পারি যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অব্যাহতভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন। ৫০ বছরের বেশি সময়ের বন্ধু ও অংশীদার হিসাবে আমরা (বাংলাদেশের কাছে) আমাদের এই আকাক্সক্ষার কথা তুলে ধরি। আমরা কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করি না। আমরা সমর্থন করি একটি খাঁটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে।

চার দিনের সফরে গতকাল ঢাকা এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার, নির্বাচন ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ রয়েছে তার সফরের আলোচ্য সূচিতে।

সরকারি ও বিরোধী দলের সঙ্গে উজরা জেয়ার বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে ম্যাথিউ মিলার বলেন, সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রমিক অধিকার, মানবাধিকার, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং মানব পাচার মোকাবেলাসহ বিভিন্ন মানবিক উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করবেন উজরা জেয়া। মত প্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা, ঝুঁকির মুখে থাকা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিকরণ, শ্রম অধিকার, সুশাসন এবং গণতন্ত্র নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভেজাল লুব্রিকেন্টস অয়েলসহ ৪ জনকে আটক
পরবর্তী নিবন্ধঢাকায় সমাবেশ করতে আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে একই শর্ত দিল পুলিশ