নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল : খসরু

বিবিসি বাংলা | সোমবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একতরফা এই নির্বাচনে বিএনপির কিছু নেতাকে লোভ দেখিয়ে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছিল আওয়ামী লীগ। তাতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবরের বিএনপিপুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় আটকের সাড়ে তিন মাস পর গত বৃহস্পতিবার জেল থেকে মুক্তি পান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মুক্তির পর শনিবার সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্বাচন সফল করার যে উদ্যোগ তা সফল হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপিকে ভোটে আনতে আওয়ামী লীগের সব কূটকৌশল ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

সাড়ে তিন মাসের বন্দি জীবনের অভিজ্ঞতার কথাও বলেন তিনি। ওই সময় বই পড়া ও শরীর চর্চার মাধ্যমে কাটানোর কথা জানান। তিনি বলেন, বই পড়লে জেল জীবনের কষ্ট কিছুটা হলেও ভুলে থাকা যায়। তিনি মনে করেন, জেলের সবচেয়ে বড় সংকট অসুস্থতা। কেননা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে মারা গেছেন, যেটি তিনি নিজেও জেলে বসে দেখেছেন। সেই শঙ্কা তারও কাজ করছিল। আটক বিএনপি নেতাদের মুক্তির শর্ত হিসেবে ভোটে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল বলে বলেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। এই প্রস্তাব কী বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সবাই পেয়েছিলেন? জবাবে খসরু বলেন, লুকোচুরি করে বিএনপি কম্প্রোমাইজ করবে, এটা আওয়ামী লীগ কিভাবে ভাবল? এটা আবার তারা পাবলিকলি বলছে, অথচ বিব্রত হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ নীতিনৈতিকতা হারিয়ে ক্ষমতা দখল করবে, আর বিএনপির মতো দল তাদের সাথে নেগোশিয়েট করবে, এটা ভাবাও তো বোকামি। আমীর খসরু মনে করেন ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল সরকারের পূর্ব পরিকল্পিত। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার যখন দেখল বিএনপির জনসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি। তখন তারা মানসিকভাবে চাপের মধ্যে চলে গিয়েছিল। সরকারের পরিকল্পনা ছিল বিশাল জনসভায় এমন কিছু ঘটনা ঘটানো হবে এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা ও সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। তারা সেটি করেছে। এবং এমন কায়দায় নির্বাচনও করে ফেলেছে সরকার। দেশের মানুষ এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার আর নির্বাচন কমিশন যে ফলাফলই দেখাক, বাস্তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল তিন থেকে চার শতাংশ। অবৈধ একটি নির্বাচন বয়কট করার জন্য বিএনপি সারা দেশের মানুষের কাছে আবেদন করেছিল। দেশের মানুষ সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছে। এটা হলো বিএনপির ফাইনাল বিজয়। আন্দোলনে বিজয়ের চেয়ে এই বিজয় আরও অনেক বড়।

আমীর খসরু বলেন, একটা দল নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে নিজেদের বিরুদ্ধেই নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। ভোট চুরি করেছে। ক্ষমতা দখল করেছে। যা করেছে সবই করেছে নির্লজ্জভাবে। একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোটে আনার পরিকল্পনা করেছিল। নির্বাচনের বৈধতা দেখাতে তারা চেয়েছিল। তারা টোটালি ফেইল করেছে। তারা সেটি পারেনি। তার মতে, বিএনপি ভাঙার এই চেষ্টার ব্যর্থতাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় পরাজয়।

সরকার পতনে বিএনপির আন্দোলন কি আরও চলবে? আগামী দিনে বিএনপির রাজনৈতিক এজেন্ডাই বা কী হবে? জবাবে খসরু বলেন, বিএনপির আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার আন্দোলন না। এটা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলন। যে আন্দোলনে দেশের জনগণ বিএনপির পক্ষে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে সরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই গ্রুপে আবার উত্তেজনা, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া
পরবর্তী নিবন্ধঅনুশীলনে মোস্তাফিজের মাথায় বলের আঘাত, পাঁচটি সেলাই