‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শীর্ষক থিম দিয়ে অর্থমন্ত্রী ২০২৩–২৪ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। অতিমারি করোনা, রুশ–ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ৫২তম বাজেট। ৭ মাসের মধ্যেই নির্বাচন সব মিলিয়ে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বাজেট।
বাজেটে মোট ব্যয় ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, মোট আয় ৫ লক্ষ কোটি, ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭ শত ৮৫ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২ শত ৪৭ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ও বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৯০ কোটি ব্যয় হবে।
মূল্যস্ফীতি, ভর্তুকি হ্রাস, ঋণের সুদ পরিশোধ ইত্যাদি সরকারকে বেশ চাপে ফেলবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস রেটিং অবনমন করেছে। আবুধাবি ইসলামিক ব্যাংক অনুরূপ বার্তা দিয়েছে। এতে বিদেশি ঋণের সুদ ও এলসি কমিশন বৃদ্ধি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনেই বলে দিয়েছেন অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। তিনি ২০২০–২১ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.১০% বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করেন। অপরদিকে অর্থনীতি বিশ্লেষকগণ বাজেট বৈষম্য সৃষ্টির কথা বলছেন নারী, শিশু, নৃ–গোষ্ঠীর বাজেট বরাদ্দ কম বলছেন। করোনা পরবর্তী ৩ কোটি নবীন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা খাতে, সংশ্লিষ্টগণ করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য খাতে মনোযোগ কম বলেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাধারণ বা মজলুম মানুষ এসব বোঝেন না। তারা বুঝে চাল, ডাল, পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস পানি সরবরাহ না পাওয়া। ব্যবসায়ীরা ত্রিমুখী ট্যাক্স চাপের কথা বলছেন। ডলার সংকটের কথা বলছেন। রিজার্ভ কমে যাওয়ার কথা বলছেন। বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সম্পূর্ণ ডিজ–অর্ডারে চলে গেছে। পাচারের টাকা, কালো টাকা সম্পর্কে কোন কথা নেই। প্রত্যক্ষ করের ওপর সরকার সোসিং করতে বলছেন। সেক্ষেত্রে করের নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। ব্যক্তি কর হার ৪ লাখ বা ৫ লাখে উন্নীত করা যেতে পারে। গত শতাব্দীর শেষ দশকের সূচনায় বিএনপি সরকারের ১৫% ভ্যাট আরোপ যুক্তি সংগত ছিলো না। এখন মোবাইল, ফ্ল্যাট, প্লট, গাড়ি, ভ্রমণ এর ওপর ভ্যাট বাড়বে।
বাজেটে দাম বেড়েছে – থালা বাসন, দেশে তৈরি মোবাইল, সিগারেট, খেজুর, কলম, চশমা, টিস্যু বিদেশি সাবান, বাসমতি চাল, কাজু বাদাম, সিমেন্ট, বিদেশি ফল।
দাম কমেছে – মিষ্টি, বিস্কুট, বিদেশি পোশাক, ওষুধ, প্রাণিখাদ্য, হিমায়িত মাছ, অপটিক্যাল ফাইবার, কনটেইনার, বৈদ্যুতিক বাতি।
সুখের বিষয় আগামী অর্থ বছরে নগদ সহায়তা বা ভাতার জন্য থাকছে ৩ হাজার কোটি টাকার ৮টি কর্মসূচি। খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসৃজনে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এফবিসিসিআই বলেছে আমদানি পণ্যে শুল্ক স্থানীয় শিল্প সংকটে পড়বে, ঢাকা চেম্বার মনে করে– ঋণ পরিকল্পনায় বেসরকারি বিনিয়োগ কমবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি বাজেটকে কল্যাণমূলক ও সাহসী বলেছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ২২০০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানিতে শুল্ক থাকায় অবকাঠামোগত নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ট্যারিফ যৌক্তিককরণে ১৯১টি পোশাক শিল্পের পণ্যের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন ২৩৪টি মৎস্য প্যাকেটজাত শিল্পে সম্পূরক কর দেশীয় উদ্যোগ নিরুৎসাহিত করবে।
সবশেষে আমরা গত ১৫ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য কঠিন দুঃসময় পার করতে চাই। বাজেট ঘোষণা নয় এর দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নই মূল কথা।