নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র চলবে না : খসরু

সদরঘাট থানা বিএনপির সমাবেশ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র চলবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় কেউ ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে থাকার চেষ্টা করলে দেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, দেশে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনী হাওয়া বইছে। এগুলো ঠেকিয়ে আবার বহুরুপে, ভিন্নরুপে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকার পায়চারি করলে সেটা চলবে না। আগে থেকে বলে দিচ্ছি, বড় বড় স্বৈরাচারকে দেশের মানুষ বিতাড়িত করেছে। ওই প্রক্রিয়ায়, ভিন্নরুপে বহুরুপের ভাব দিয়ে আর কোনো স্বৈরাচারকে থাকতে দিব না। নির্বাচন দিতে হবে, দেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। দেশের মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম গত ১৫২০ বছর ভোট দিতে পারে নাই। মহিলারা ভোট দিতে পারে নাই। সবাই ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে নগরের মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড রোডে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সদরঘাট থানা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এতে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। সদরঘাট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সদস্য আলহাজ্ব মো. সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সদরঘাট থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম সম্রাট।

আমীর খসরু বলেন, মাঝখানে কেউ এসে খেলাধুলা করে লাভ হবে না। মাঝখানে কেউ এসে খেলাধুলা করবেন, ভোট পিছিয়ে দিবেন, বিলম্বিত করবেন, অন্য ষড়যন্ত্র করে ওই শেখ হাসিনা একভাবে স্বৈরাচার, আপনারা অন্যভাবে এসব করে লাভ হবে না। তাই আগে থেকে জনগণের দেওয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। শেখ হাসিনা জনগণের দেওয়ালের লিখন পড়তে পারে নাই।

খসরু বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার অপেক্ষায় আছে। জীবনের নিরাপত্তা দেশের মানুষ চাই। তাই কিছু মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোন পথে যাবে। সেটা কি জনগণ গ্রহণ করবে? যত সংস্কার প্রয়োজন, তত সংস্কার দেশের সংসদে হবে ইনশাআল্লাহ। বিএনপি এবং সহযোগীরা আগামী সংসদে সব সংস্কার ৩১ দফার মধ্যে আছে। এর বাইরেও যদি সংস্কার থাকে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে সংস্কার করবো।

তিনি বলেন, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিনিয়ত সংস্কার হবে। দেশে এমন কোনো বুদ্ধিমান মানুষ হয়নি, উনারা বসে সংস্কার করবেন। আর বাংলাদেশ প্রত্যেক বছর এ ধারায় চলবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিনিয়ত সংস্কার হতে হবে। সংস্কারের দোহায় দিয়েন না, শুধু নির্বাচনের সংস্কার করেন। নির্বাচনী সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে জনগণের মালিকানা ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেন। নির্বাচিত সংসদ সরকার আগামী দিনে যত সংস্কার সবগুলো করবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় হবে না।

আমীর খসরু বলেন, দেশ স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে। দেশ যেই কারণে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রবর্তন করা। গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদের যাবেন, সরকার গঠন করবেন। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, সে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ছিল না, জবাবদিহি ছিল না। কারণ, সে অনির্বাচিত, দখলদার, স্বৈরাচার। বাংলাদেশে আমরা আর কোনোদিন কাউকে দখল করতে দিব না। বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচারকে ক্ষমতা দখল করে থাকতে দিব না। স্বৈরাচার বহুরুপের আছে। স্বৈরাচারের রুপ কিন্তু অনেক রকম। অনেকে জনগণের ভোট নিয়ে স্বৈরাচার হয়ে যায়। অনেকে দেশের মানুষের কথা বলে স্বৈরাচার হয়ে যায়। অনেকে আন্দোলনকে হাইজেক করে স্বৈরাচার হয়ে যায়।

সরকার পতনের সময় শ্রমিকরা ভূমিকা রাখায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিক ভাইয়েরা শেখ হাসিনার পতনের জন্য রাস্তায় লড়াই করেছেন। গত ৩ এবং ৪ আগস্ট নিউ মার্কেট মোড় রাস্তায় শেখ হাসিনার পতনের জন্য ভূমিকা রেখেছেন, আপনাদের আমি সম্মান জানাই, ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই বিএনপির নেতাকর্মী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। যারা গত ১৬ বছরে জীবন দিয়েছেন, গুম, খুন হয়েছে, পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন, পঙ্গু হয়েছেন এবং জেলখানায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন, সন্তান হারিয়েছেন।

এ সময় শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়ে খসরু বলেন, শ্রমিকদের অনেক সমস্যা আছে। গভীরভাবে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে কাজ করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ, যত সমস্যা আছে গভীরভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের সঙ্গে আমরা বসবো এবং কথা বলে সেসব সমস্যা সমাধান করবো। বিএনপির ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবে আপনাদের সমস্যার কথা বলা হয়েছে। সমাধানের কথাও বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আন্দোলন এবং স্বৈরাচারকে যেভাবে বিতাড়িত করা হয়েছে, সেভাবে সবসময় তাদের চোখ কান খোলা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকা শহরের চারিদিক থেকে যখন মিছিল আসতো এই মিছিলের অগ্রভাগে ছিল শ্রমিকের মিছিল। এই মিছিল দেখেই শেখ হাসিনা লক্ষ্মণ সেনের মত পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সব সময় পালিয়ে যায়। ৭১ সালে শেখ মুজিব ও ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনা পালিয়েছিল। আর ৭১ সালে শহীদ জিয়া ও ওয়ান ইলেভেনের সময় বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছিল। ২৪ এর গণ আন্দোলনে হাল ধরেছে তারেক রহমান। আজকে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে একটি দুর্নীতি মুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নতুন প্রজন্মকে উপহার দিতে পারব।

তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ খাল খনন কর্মসূচি আমরা চট্টগ্রামে শুরু করেছি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের চাক্তাই খালসহ বহু খাল খনন করেছি। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য সদরঘাট এলাকার গুলজার খাল ও বালির মাঠ সংস্কার করা হবে। ৪১টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করে দেব। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য প্রচুর ফান্ড আছে। সবগুলো রাস্তা সংস্কার করে দেবো, ইনশাআল্লাহ।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, চট্টগ্রামে গণ আন্দোলনের সময় নিউ মার্কেট মোড়ে শ্রমিকরা অগ্রভাগে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যখন সমাবেশে হামলা করে তখন এই শ্রমিক ভাইয়েরা ছাত্র জনতার সাথে মিলে তাদেরকে প্রতিহত করেছিল। অনেক রক্ত ঝরেছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে কিন্তু রাস্তা ছেড়ে দেয়নি। সেদিন ছাত্রজনতা ও শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে গিয়েছিল। আজকে রক্তঝরা একটি আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তরবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ধৈর্য ধারণ করতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।

এরশাদ উল্লাহ বলেন, শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই শহীদ জিয়া শ্রমিক দল গঠন করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া শ্রমিক সমাজের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছেন। আর বিগত সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ ধ্বংস করেছে, লুটপাট করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফায় শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এটি বাস্তবাায়িত হলে শ্রমিক সমাজের উন্নতি হবে।

নাজিমুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা হচ্ছেন অর্থনীতির প্রাণ। তাদেরকে বাচিয়ে রাখবে হবে। চট্টগ্রামে কোন চাঁদাবাজি চলবে না। যারাই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল, আব্দুল হালিম শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, আহবায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন জিয়া, মশিউল আলম স্বপন, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার।

বক্তব্য রাখেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, জাসাসের আহ্বায়ক এম এ মুছা বাবলু, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম, মহানগর বিএনপি নেতা মো. আলী, মো. সেকান্দর, কাউছার হোসেন বাবু, খোরশেদ আলম, কামরুন্নাহার লিজা, আজম খান, জামাল উদ্দিন জসিম, জিয়াউর রহমান জিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, নজরুল ইসলাম মিয়াজী, মো. জুয়েল, মো. মনির, মো. আকতার, জামাল উদ্দিন, মো. নবী মো. রশিদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথার্টি ফার্স্ট নাইটে সিএমপির ১৩ নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধমিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মি উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে