বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সংস্কারের কথা সবার আগে বলেছি। কিন্তু সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়। আমরা মূলত যেটা বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যে বিষয়গুলো আছে সেটা করে ফেলা, দ্রুত ইলেকশন (নির্বাচন) করা এবং একটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো করতে হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া, সেই বিষয়গুলো বলে এসেছি। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, না, মহাসচিব কোনো মন্তব্য করেননি। কারণ এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
গুতেরেসের সঙ্গে কেন বৈঠক, আমি ঠিক বুঝিনি : সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে কেন এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে সেটা বুঝতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আসলে এই গোলটেবিলটা…আমি ঠিক বুঝিনি আর কী। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
টাইম ফ্রেম দিতে যাব কেন : বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করা হয়েছিল। এখানে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ছিলেন। মূলত এখানে যে সংস্কারের ব্যাপারগুলো, যেগুলো নিয়ে কমিশনগুলো করা হয়েছে সেই সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আমাদের আগের বক্তব্যই তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আমরা একই কথা বলেছি আমরা। সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, সেই সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বক্তব্য কী ছিল জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি এই ব্যাপারে কোনো কমেন্ট করেননি। গোলটেবিল বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সময়সীমার কথা আপনারা বলেছেন কিনা, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ওখানে টাইম ফ্রেম নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নাই। কারণ এটা তো আমাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
আগামী নির্বাচন নজির সৃষ্টি করবে : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের তরফে বলা হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আপনারা বসে রিফর্ম কী করবেন, সেটা ঠিক করেন এবং নির্বাচন যা হবে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী হবে। বাংলাদেশে যেন একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে এটা তিনি আশা করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামী ইলেকশন, উনি (গুতেরেস) আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
শেখ পরিবারের তিনজনের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার কথা বলেছি : এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, এবি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা ২/৩টা জিনিস বলেছি। আমরা বলেছি, জাতিসংঘের তিনটা প্রতিষ্ঠানে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার তিনজন আত্মীয় কাজ করছেন, আমি জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলেছি, জাতিসংঘ যেহেতু ইনসাফ চায়, ইনসাফটা যেন শুরু হয় জাতিসংঘের নিজের অফিস থেকে। আমরা বলেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শেখ হাসিনার মেয়ে কাজ করছেন, ইউএনডিপিতে শেখ রেহানার ছেলে ববি কাজ করছেন এবং ববির স্ত্রী কাজ করছে মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশনে। আমরা বলেছি এই নিয়োগগুলোকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য।
বৈঠকে বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। অন্য দলগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বেলা ১টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৈঠক শুরু হয়। সেখানে ছিলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার। জাতিসংঘ ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।
সেখানে ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।