নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো ধরনের সহিংসতা কাম্য নয়

| রবিবার , ৯ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই আমাদের রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়। কোথাও কোথাও সংঘাত তৈরির আশংকা সৃষ্টি হয়। ঠিক সেভাবে এখন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শুরু হয়েছে সভাসমাবেশের আয়োজনের প্রতিযোগিতা।

চট্টগ্রাম৮ বোয়ালখালীচান্দগাঁওপাঁচলাইশ ও বায়েজিদ (আংশিক) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে খুব কাছ থেকে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন বাবলা (৪৩)। এসময় গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহ ও ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরানুল হক শান্ত। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চাইল্যাতলী খোন্দকারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরশাদ উল্লাহ ও শান্তকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে শান্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিউতে নেয়া হয়েছে। চিকিৎসা শেষে এরশাদ উল্লাহকে আশঙ্কামুক্ত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ জানিয়েছেন, এরশাদ উল্লাহ দুর্বৃত্তের টার্গেট ছিলেন না। মূল টার্গেট ছিল নিহত সরোয়ার বাবলা। বাবলার প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় কারা জড়িত তা প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যাচ্ছে। ঘটনার মূল কুশীলব বর্তমানে জেলে আছে।

দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, স্থানীয় একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন এরশাদ উল্লাহ। একই মসজিদে নামাজ পড়েন বাবলাও। নামাজ শেষে বের হয়ে গণসংযোগ করছিলেন এরশাদ উল্লাহ। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন বাবলা। এ সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা গেছে, ভিড়ের মধ্য থেকে হঠাৎ একটি হাত বের হয়ে বাবলাকে টার্গেট করে পেছন থেকে গুলি করা হচ্ছে। তখন বাবলার সামনে একটি দোকানে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন এরশাদ। গুলির শব্দ শুনে উপস্থিত লোকজন আতংকে সরে যান। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তায় সাদা রঙের ট্র্যাকস্যুট পরা এক যুবক মাটিতে লুটিয়ে আছেন। তার শরীর থেকে রক্তের স্রোত গড়িয়ে পড়েছে। ওই যুবকই সরোয়ার বাবলা।

ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক। আগামী নির্বাচন নিয়ে পরিবেশ হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত। বিভিন্ন দল নানামুখী ও বিপরীত অবস্থানে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, জনসাধারণের মধ্যে ততই বাড়ছে উদ্বেগউৎকণ্ঠা। এ বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিভিন্ন মহলেও। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সামগ্রিক অর্থনীতি।

বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থায় কোনো পক্ষকে সংঘাতকে ‘ওয়েলকাম’ করলে সেটি কারও জন্য ভালো হবে না। বর্তমান যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, সেঅবস্থায় অনুমান করা কঠিন নয় যে সংঘাত অনিবার্য। তখন ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়বে। মনে রাখতে হবে, বিদেশি ব্যবসায়ীরা কিন্তু কোনো ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা করতে আসবেন না। যখন রাজনৈতিক দলের সংঘাতের অবস্থানে চলে যায়, তখন তার প্রভাবপ্রতিক্রিয়া কেবল দেশের মধ্যেই থাকে না, বাইরেও চলে যায়। আমাদের মনে রাখা দরকার যে, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্থিতিশীল পরিবেশ। দেশে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সংঘাত সহিংসতা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।

আসলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতি কিংবা সংঘাতের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্টদের সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রশাসনকে প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে হবে, নইলে পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আক্রমণের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই সতর্ক অবস্থান জরুরি। এছাড়া রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের প্রচারপ্রচারণার উৎসব যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই।

আমরা নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো ধরনের সহিংসতা চাই না। এ ধরনের সংঘাতসংঘর্ষের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী উৎসবের আমেজকে ব্যাহত করবে। সহিংসতার ঘটনায় নাগরিকদের মনে চরম উদ্বেগআতঙ্ক দেখা দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে