মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সময়ের পর তিন দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করেও ৭০৯টি শূন্যপদ পূরণ করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ অবস্থায় চতুর্থ দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে চসিকে কর্মরত সাত হাজার অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে শূন্যপদের বিপরীতে তাদের স্থায়ী করার দাবি জানিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পর গত মাসে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকও হয়েছিল। তবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ওই বৈঠকের রেজ্যুলেশন প্রকাশ না হওয়ায় স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নিতে পারছে না চসিক।
সময় বৃদ্ধির জন্য চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অস্থায়ীদের স্থায়ী বা নিয়মিতকরণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে যে বৈঠক হয়েছিল সেটার রেজ্যুলেশন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে। মিটিংয়ে পজেটিভ আলোচনা হয়েছে। তবে লিখিত যে সিদ্ধান্ত আসবে সে আলোকে ব্যবস্থা নেব।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি চসিকের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর ৬১২টি শূন্যপদ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি শূন্যপদ পূরণের জন্য ছাড়পত্র দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে পত্র জারির ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়।
তবে নির্ধারিত সময়ে শূন্যপদ পূরণ করতে পারেনি চসিক। পরবর্তীতে চসিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিন দফা সময় বৃদ্ধি করে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত, দ্বিতীয় দফায় একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং তৃতীয় দফায় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। এদিকে অস্থায়ীদের বিষয়ে গত মাসে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ের লিখিত সিদ্ধান্ত না আসায় শূন্যপদ পূরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছে না চসিক। ফলে আগামী ৩০ জুনের মধ্যেও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই গত রোববার চতুর্থ দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পত্র দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শহীদুল আলম।
ওই পত্রে ইতোপূর্বে নির্ধারিত সময়ে শূন্যপদ পূরণ করতে না পারার ব্যাখ্যাও দেয়া হয়। এতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত একই বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে সরকারি ছুটি ঘোষণার ফলে অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাছাড়া চসিকের ৫ম নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মেয়রের এর ক্ষমতা হস্তান্তরসহ নানাবিধ কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া মেয়াদে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু সেবার কোভিড-১৯ প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় একই বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এতে নিয়োগ পরীক্ষাসহ এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, চসিকে অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে বর্তমানে এক হাজার ৫৪৫ টি শূন্যপদ রয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ পদে ৬০ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের দাবিতে আন্দোলন করেন অস্থায়ীরা। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে চসিক। মেয়রও চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ১৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি দাপ্তরিক পত্র দেয় চসিক। এতে সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত শূন্যপদসমূহ অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট শূন্যপদসমূহ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণে নির্দেশনা চাওয়া হয়। গত ৭ মার্চ চিঠিটির জবাব দেয় মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এবং বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী মানবিক কারণে অস্থায়ীভাবে কর্মরত কোনো কর্মচারীকে শূন্যপদে নিয়োগ প্রদানের সুযোগ নাই।’
তবে ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন-কানুনের আওতায় এনে অস্থায়ীদের সুযোগ দিয়ে রেগুলাইজ (নিয়মিত) করার একটা ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৪ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি সভায় হয়। সেখানে কাঠামোভুক্ত শূন্যপদের বিপরীতে অস্থায়ীদের স্থায়ী বা নিয়মিতকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সচিব জাহিদুল ইসলাম জোমাদ্দার দৈনিক আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ীকরণের চিঠি আসার অপেক্ষায় আছে চসিকের অস্থায়ীরা।