নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ, সাশ্রয় ২৪ কোটি টাকা

কেজিডিসিএলের এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়ন ৫০ হাজার মিটার স্থাপনের আরেকটি প্রকল্প আসছে

হাসান আকবর | বুধবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সরকারের নানা প্রকল্পে সব সময় ব্যয় বাড়লেও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পে ২৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। একইসাথে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের আওতায় নগরীতে এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপিত হয়েছে। তবে শহরের আবাসিক খাতের বিপুল পরিমাণ গ্রাহক এখনো প্রিপেইড মিটারের আওতার বাইরে থাকায় গ্যাসের অপচয় সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। একটি চুলার সংযোগ নিয়ে আটদশ পরিবারের রান্না চলছে। নগরীর ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা গেলে গ্যাসের অপচয় ও চুরি বহুলাংশে কমে আসত উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে নগরীতে আরো ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের একটি প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, আবাসিক খাতে গ্যাসের চুরি, অবৈধ এবং চোরা সংযোগ বন্ধ এবং সর্বোপরি অপচয় ঠেকাতে সরকার প্রিপেইড মিটার সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেয় বছর কয়েক আগে। নানা প্রক্রিয়া শেষে নগরীতে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। কর্ণফুলী গ্যাসের প্রায় ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মাঝে প্রথম দফায় ৬০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পর কর্তৃপক্ষ গ্যাসের অপচয় ও চুরি অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়। জাপান সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় ৬০ হাজার মিটার স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। জাপান থেকে আনা প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট গ্রাহকেরা স্বস্তি পান। কেজিডিসিএলও আর্থিকভাবে লাভবান হয়। গ্যাস বিক্রির আগে ব্যাংকে টাকা চলে আসছে। বকেয়া বিলের জন্য অভিযান চালাতে হচ্ছে না কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হচ্ছে না। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়া হয়। একইসাথে গ্যাস খাতে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হতে শুরু করে। চুলা না জ্বালালে বিল আসছে না। আবার নিজেরা ইচ্ছে করলে বিল সাশ্রয় করতে পারছে। পোস্টপেইড চুলা থেকে প্রিপেইড মিটারে খরচ কমে যাওয়ায় নগরীর হাজার হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রকল্প গ্রহণের আগেই অন্তত ৯২ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের জন্য আবেদন করেন।

গ্রাহকদের আগ্রহে কেজিডিসিএল নতুন করে ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য ২৪১ কোটির বেশি টাকার নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানসহ নানা প্রক্রিয়া শেষে জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ দেয়া হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে। কিন্তু ইতোমধ্যে উক্ত প্রকল্পের ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ২৪১ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২১৭ কোটি টাকায় সম্পন্ন হয়েছে। সাশ্রয় হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। সরকারি নানা প্রকল্পে যেখানে প্রায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে, সেখানে একটি প্রকল্প থেকে ২৪ কোটি টাকা সাশ্রয় প্রশংসা কুড়ায়।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন বস্তি এবং কলোনিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে একটি চুলার সংযোগ নিয়ে ১০/১৫টি পরিবার রান্না করত, সারাদিন চুলা জ্বলত। তবে এসব সংযোগের বিপরীতে কেজিডিসিএল একটি চুলার বিলই পেত। রেলওয়ের একটি কলোনির উদাহরণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ে কলোনিতে একটি চুলার অনুমোদন নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রান্না করত ১০১৫ পরিবার। অনেকে এক চুলা থেকে কয়েকটি চুলায় সংযোগ দিত। কিন্তু প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর এসব চুরি ও অপচয় পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। রেলওয়ের কলোনিতে ৪ হাজার ২শ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।

কেজিডিসিএলের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে জানান, আমরা কয়েকটি কলোনিতে ভয়াবহ রকমের অপচয় এবং গ্যাস চুরির হদিশ পেয়েছি। এসব কলোনিতে প্রিপেইড মিটার দেয়া হয়েছে। তবে নগরীতে এখনো বহু কলোনি এবং বস্তি রয়ে গেছে, যেখানে একটি সংযোগ নিয়ে ৮১০ পরিবারের রান্না চলে। এগুলোকে পুরোপুরি প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা গেলে গ্যাস চুরি ও অপচয় শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব হতো।

তিনি বলেন, নগরীতে গ্রাহক রয়েছে ৬ লাখের মতো। আমরা ১ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে পেরেছি। বাকি গ্রাহকদের যত দ্রুত সম্ভব প্রিপেইডের আওতায় আনা গেলে দেশের গ্যাস সেক্টর লাভবান হতো।

অপর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রিপেইড মিটারের ব্যাপক সাফল্য এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নতুন করে ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের তৃতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে প্রায় ১১০ কোটি টাকা খরচ হবে। সংস্থা নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আবাসিক খাতে ১৫ শতাংশের বেশি গ্যাস লাগে। এতে দৈনিক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চুরি ও অপচয় হচ্ছে। একমাত্র প্রিপেইড মিটার এই চুরি ও অপচয় ঠেকাতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেউ তদন্ত-অনুসন্ধানে চাপ দিলে নাম প্রকাশ করে দেব
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের চারটি সরকারি কলেজ ‘এ’ ক্যাটাগরির