১৯ দিন পেরুলেও কমিটির আকার বাড়েনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির। অথচ দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিকে ৫১ সদস্যে উন্নীত করার নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রের। নির্ধারিত সময়ে কমিটির আকার না বাড়ায় ক্ষোভ আছে দলটির তৃণমূল কর্মীদের মাঝে।
জানা গেছে, গত ৭ জুলাই এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে নগর বিএনপির দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর নগরে ‘ধরপাকড়’ শুরু হওয়ায় গ্রেপ্তারের ভয়ে ‘আত্মগোপনে’ চলে যান নগর বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতা। এমনকি প্রায় সময় বন্ধ থাকে তাদের মোবাইল ফোনও। ফলে তৃণমূল কর্মীরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এর আগে ১৯ জুলাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জুবিলি রোডে আয়োজিত মিছিলে তাদের প্রকাশ্যে দেখা যায়। একইদিন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা। ‘আত্মগোপনে’ যাওয়ার পর থেকে অবশ্য দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছেন তারা। এর আগে কমিটি ঘোষণার পর ১৩ জুলাই নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় মাঠে তাদের যৌথভাবে সংবর্ধনা দেয় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। একইদিন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে দলীয় চেয়ারপার্সনের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করা হয় নগর বিএনপির ব্যানারে।
নগর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশ না করে শর্তে আজাদীকে বলেন, সবার প্রত্যাশা ছিল কেন্দ্রের নির্ধারণ করে দেয়া সময়সীমার মধ্যেই কমিটির আকার বাড়াবেন নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু তারা তৃণমূলকে হতাশ করে। এটা নিয়ে সবার মধ্যে ক্ষোভ আছে। কিন্তু ভয়ে প্রকাশ্য কেউ তাদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করছে না। ‘ভয়’–এর ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূল কর্মীরা বলেন, নেতৃত্বের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বললে ভবিষ্যতে কমিটির আকার বৃদ্ধি করার সময় তাদের বাধ দেয়ার সম্ভাবনা আছে।
নির্ধারিত সময়ে কমিটির আকার বৃদ্ধি না করা প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমরা আন–অফিসিয়ালি কমিটি মোটামুটি প্রস্তুত করে রেখেছি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটা ঘোষণা করা হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কলে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা কমিটি নিয়ে কাজ করছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং কারফিউ শুরু হয়ে গেল। পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন তো আর কমিটি দেয়ার সুযোগও নেই। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। মৌখিকভাবে আমাদের সময় বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্র।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নগর বিএনপিতে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। যা ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৬ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির করা হয়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করে এ পূর্ণাঙ্গ কমিটি। পরবর্তীতে ২০২০ সালে ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাতকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যা গত ১৩ জুন বিলুপ্ত করা হয়। ওই আহ্বায়ক কমিটি নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি।
এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা কমিটি ছিল কম সদস্যের। ওই কমিটির আকার ছিল পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট। বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু মাহমুদ চৌধুরী সভাপতি এবং ডা. শাহাদাত হেসেন ছিলেন ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক।