নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না কাজ

ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রথম ক্যাচমেন্ট ।। ৬৮ শতাংশ কাজ শেষ, টার্গেট ২০২৭ সালের জুন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

কাজ চলমান থাকলেও নির্দিষ্ট সময় ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হচ্ছে না চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ। ওয়াসার মাস্টার প্ল্যানের আওতায় পুরো চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ছয়টি জোনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে।

বাংলাদেশ সরকার ও ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। শুরু থেকে নগরীতে এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে গেলেও মাঝখানে কাজের গতি কিছুটা থেমে যায়। যার কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করা যাচ্ছে না। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৭ সালে এই প্রকল্পের এরিয়াভুক্ত আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকার ২০ লাখ মানুষকে আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্র নিয়ে তারা কাজ করছে।

এ প্রকল্পের অধীনে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের ২৮ হাজার বাড়িঘরে স্যুয়ারেজের লাইনের কাজ চলছে। ২০০ কিলোমিটারের বেশি পয়ঃপাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে মাটির ৫ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত গভীরে। নির্মাণ করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় ম্যানহোলসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো। একইসাথে চলছে গ্রাহক পর্যায়ে পয়ঃসংযোগ লাইন প্রদানের কাজও। হালিশহরের ১৬৩ একর ওয়াসার জমিতে দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি কাজ চলছে পুরোদমে। দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার সংস্থা তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে।

প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ ২০২৬ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের আরো কয়েক মাস লাগবে। আমাদের টার্গেট ২০২৭ সালের জুনে আমরা নগরীতে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা চালু করব। ইতোমধ্যে পুরো প্রকল্পের ৬৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ২০০ কিলোমিটার পয়ঃপাইপলাইনের মধ্যে ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ চলছে। হালিশহরে ১৬৩ একর জমিতে দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সিভিল কন্সট্রাকশনের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ইলেক্ট্রো মেকানিক্যালের কাজ শেষ হয়েছে ৪০ শতাংশ।

এদিকে ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আরো ৫টি ক্যাচমেন্ট বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে উত্তর কাট্টলী এলাকায় ক্যাচমেন্ট৫ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর এখন কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নভেম্বরে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। এ প্রকল্পের সুবিধা পাবে খুলশী, উত্তর কাট্টলীসহ আশেপাশের এলাকা। বাংলাদেশ সরকার ও ফ্রান্সের ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (এএফডি) অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।

এদিকে গত বছরের ২৫ নভেম্বর একনেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট(কালুরঘাট) এবং ক্যাচমেন্ট(বাকলিয়া) বাস্তবায়নে ৫ হাজার ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের জাইকার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাটের হামিদচরের ৭৪ একর জায়গায় প্রকল্পের মূল স্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। এটি দৈনিক ৬০ হাজার ঘনমিটার ধারণ এবং প্রয়োজনীয় পরিশোধন করবে। প্রকল্পের অধীনে প্রধান স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে ১১ কিলোমিটার, শাখা স্যুয়ারেজ লাইন ৭০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস লাইন হবে ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৯৩২টি ম্যানহোল এবং গৃহ সংযোগ ও ক্যাচপিট নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পে দুটি এলাকার ২৮ হাজার ঘরবাড়ি সংযুক্ত করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট(কালুরঘাট) এবং ক্যাচমেন্ট(বাকলিয়া) এর পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে ২৩ মার্চ একনেকে ২ হাজার ১৫৪ দশমিক ৯৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পেরও কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের তিন নম্বর ক্যাচমেন্ট নিয়ে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করেছে ওয়াসা। এটি সিটি কর্পোরেশনের ফতেয়াবাদ এলাকার ১, , , ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডকে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ ও কোরিয়ার এঙ্মি ব্যাংকের ইডিসিএফের অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

স্যুয়ারেজ প্রকল্পের সর্বশেষ ক্যাচমেন্ট হলো ক্যাচমেন্ট৬। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায়। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের মারুবিনি কনস্ট্রাক্টশন কোম্পানির যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এটিও এখন পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসতর্ক থাকার আহ্বান, পুলিশকে জানাতে বলল সিএমপি
পরবর্তী নিবন্ধডিবি সেজে প্রতারক ফোনে যা বলল