নিরুপমা দেবী: নারীর নন্দনতত্ত্ব প্রকাশের শৈল্পিক লেখক

| শুক্রবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

নিরুপমা দেবী। তাঁর বিশেষ পরিচিতি ঔপন্যাসিক হিসেবে। তবে ছোট গল্প, কবিতা এবং গানও রচনা করেছিলেন প্রচুর। তার উপন্যাস নারীর একান্ত শিল্পাঙ্গিক রূপ। বাঙালি নারীরা তার উপন্যাসিক চরিত্রকে অনেকখানি সত্যে পরিণত করেছে। স্বদেশী যুগে তাঁর দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
নিরুপমা দেবীর জন্ম ১৮৮৩ সালের ৭ মে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। তাঁর সাহিত্য সাধনার শুরু কিশোর বয়স থেকেই। নিরুপমার অকালবৈধব্যের পর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বিভূতিভূষণ ভট্ট ও কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় সাহিত্যসাধনায় ব্রতী হন। বিভূতিভূষণ ও শরৎচন্দ্র পরিচালিত হাতেলেখা পত্রিকায় তার সাহিত্যরচনার হাতেখড়ি। শরৎচন্দ্র তাঁকে গদ্যরচনায় ও অনুরূপা দেবী গল্প রচনায় অনুপ্রাণিত করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘উচ্ছৃঙ্খল’। স্বদেশীযুগে তার রচিত বহু গান এবং কবিতা জনপ্রিয় হয়েছিল। প্রেম ও দাম্পত্য জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব তার উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। ১৯১৯-২০ সালের ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দিদি’ তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে স্বীকৃত। নিরুপমা দেবীর উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহের মধ্যে ‘দিদি’, ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’, ‘শ্যামলী’, ‘আলেয়া’, ‘বিধিলিপি’, ‘যুগান্তরের কথা’, ‘অনুকর্ষ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচনার প্রধান বিষয় গ্রামীণ জীবন, বিশেষ করে নারী-জীবনের আনন্দ-বেদনা, পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রভৃতি। কাহিনির বিষয়বস্তুত শরৎচন্দ্রের প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকলেও গদ্যশৈলীতে নিরূপমার রচনা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। তাঁর বেশ কিছু উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে, অভিনীত হয়েছে মঞ্চে। ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিরুপমা ‘ভুবনমোহিনী’ স্বর্ণপদক এবং ১৯৪৩ সালে ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদক লাভ করেন। শেষ জীবনে তিনি বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা নিয়ে বৃন্দাবন চলে যান। বৃন্দাবনে বসবাসকালে ১৯৫১ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্যরক্ষায় প্লাস্টিকের কাপের বিকল্প ভাবতে হবে