প্রতিবারের মতো এবারও আজ ২২ মার্চ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছর নিরাপদ সুপেয় পানির ওপর এক একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দিবসটি পালন হয়ে আসছে। ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত পালিত পানি দিবসগুলোতে স্থান পেয়েছে নারী ও পানি, তৃষ্ণার জন্য পানি, পানির প্রতুলতা, ভূগর্ভস্থ পানি, ভাটির অধিবাসীর জীবন, একুশ শতকের পানি, পানি ও স্বাস্থ্য, উন্নয়নের জন্য পানি, ভবিষ্যতের জন্য পানি, জীবনের জন্য পানি, পানি ও সংস্কৃতি, পানির অপ্রতুলতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, আন্তঃসীমান্ত পানি, পানির মান, শহরের জন্য পানি, পানি ও খাদ্যের নিশ্চয়তা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বাংলাদেশে পানির ব্যবহারের ৮৮% চাষাবাদের জন্য, ১০% গৃহস্থালির কাজে এবং বাকি মাত্র ২% শিল্পখাতে। চাষাবাদের ক্ষেত্রে পানির ব্যবহারের সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে সেচ যা কিনা দ্রুতবর্ধনশীল শস্য উৎপাদনের জন্য আবশ্যক। এক হিসাবমতে, বাংলাদেশে প্রায় ১২ লক্ষ সেচ পাম্প রয়েছে যার শতকরা ৮৫ ভাগ ডিজেল-চালিত। ফলশ্রুতিতে বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ টন ডিজেলের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বাকি ১৫ শতাংশ পাম্প বিদ্যুৎচালিত। ২০০৪-০৫ এর হিসাবমতে, সব মিলিয়ে বর্তমানে সেচ খাতে বাংলাদেশে বিদ্যুতের সরবরাহ দেশের মোট যোগানের প্রায় ৪ শতাংশ। অন্যদিকে গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের শতকরা ৮৪ ভাগই বেসরকারি/ব্যক্তিগত খাতে এবং বাকি ১৬ শতাংশ সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সরকারি খাতে সরবরাহকৃত পানির উত্তোলন, বিশুদ্ধীকরণ, সরবরাহ এবং ব্যবহৃত বর্জ্য পানির নিষ্কাশন পরিশোধনেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সবার জন্য উন্নত উৎসের পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষের উন্নত উৎসের পানি পাওয়ার সুযোগ আছে, জানা যায় ২০১৩ সালের একটি জরিপে। তবে পুরোপুরি নিরাপদ পানি পানের সুযোগ এখনও সীমিত, মাত্র ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০০০ সালের তুলনায় ২০১২ সালে আর্সেনিক যুক্ত পানি পানকারীর হার ২৬ দশমিক ৬ থেকে কমে ১২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এরপরেও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক দূষণ আক্রান্ত মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। অগ্রগতি সত্ত্বেও এক কোটি ৯৪ লাখ মানুষ এখনও সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এছাড়া পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরাইড ও লৌহ দূষণের কারণেও খাওয়ার পানির মান খারাপ থাকে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ পানির উৎসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া যায়। মলের জীবাণু রয়েছে এমন উৎসের পানি পান করছে ৪১ শতাংশের বেশি মানুষ। এক্ষেত্রে স্বল্প শিক্ষিত নগরবাসী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জরিপে বলা হয়েছে। শহরাঞ্চলের এসব পরিবারে যে পানি খাওয়া হয় তার এক তৃতীয়াংশেই উচ্চমাত্রার ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যা ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উৎস থেকে বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহের সময় এতে আরও বেশি ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া চলে যায়। প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে দুটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া দূষিত উৎসের পানি পান করে। আবার ঘরের কল বা টিউব-ওয়েলের আশপাশ পরিষ্কার না থাকায় বিভিন্ন অণুজীবযুক্ত পানি পানকারীর সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় নয় কোটি ৯০ লাখ।
নিরাপদ পানি পাওয়া সকলের নাগরিক অধিকার। কিন্তু দেশের মানুষ নিরাপদ পানি সহজে পাচ্ছে না। তাই রোগ ব্যাধি কোটি কোটি মানুষকে কাবু করে ফেলেছে। নানা রোগে আক্রান্তের কারণে মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
চলতি মাসেই নগরীতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বর্তমানে দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে সংস্থাটি। এর মধ্য দিয়ে ওয়াসার পাইপ লাইনে ২৪ ঘণ্টা পানি পেতে যাচ্ছেন নগরবাসী। দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসী অপেক্ষায় ছিলেন, কখন ওয়াসার পাইপ লাইনে ২৪ ঘণ্টা পানি পাবেন। পানি দিবসে সেই প্রতীক্ষার অবসান কামনা করেন তাঁরা।