আবাদ মানেই যখন নানা কীটনাশক ও বিষাক্ত সারের ব্যবহার, সেখানে রাঙ্গুনিয়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে নিরাপদ সবজি চাষ পদ্ধতি। মালচিং পদ্ধতিতে জমি প্রস্তুত, বিষাক্ত সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার এবং পোকা দমনে প্রয়োগ করা হচ্ছে সেঙফেরোমন ফাঁদ। এতে অল্প শ্রম, কম খরচ করেও দ্বিগুণ উৎপাদন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক এবং বিষমুক্ত সবজি পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন ক্রেতারাও।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার কৃষকদের নিরাপদ সবজি আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থাকায় রাঙ্গুনিয়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে নিরাপদ সবজি চাষের নানা পদ্ধতি। এর ফলে উপজেলার অধিকাংশ জমিতে সবজি আবাদে ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিষমুক্ত সবজি।
সরেজমিনে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্লকে কৃষকরা সবজি আবাদে ব্যবহার করেছেন মালচিং পদ্ধতি। টমেটো, মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন আবাদের কৃষি মাঠকে বিশেষ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এর ভেতর দিয়ে সবজি গাছগুলো বড় হচ্ছে। পুরো মাঠজুড়ে অত্যন্ত পরিপাটি সবজি ক্ষেতগুলোতে নেই বিনা চাষে জন্মানো ঘাস কিংবা আগাছা। ফলন আসা পাশের বেগুন ক্ষেতের মাঝখানে দেখা গেছে প্লাস্টিক বঙ। যেটির সাহায্যে বসানো হয়েছে সেঙফেরোমন ফাঁদ। এতে দমন করা হচ্ছে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকার উপদ্রব। কৃষকরা জানান, এসব ক্ষেতে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার ও কেঁচো সার। উপজেলার বেতাগী ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান জানান, মালচিং পদ্ধতিতে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ সবজি আবাদ হচ্ছে। মূলত শীত মৌসুমে জমিতে পানির স্বল্পতা থাকায় এই মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রথমে কৃষি জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হয়, তারপর সেখানে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ শেষে বীজ কিংবা চারা রোপণ করে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এর ফলে এই জমিতে আগাছা জন্মায় না, কম সার প্রয়োগ করতে হয়, সেচের অপচয় হয় না এবং ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করতে পারে না। ছত্রাক কিংবা বিভিন্ন রোগের আক্রমণও কম হয়। সর্বোপরি ভালো উৎপাদন হয়। তাই কৃষকদের উৎসাহিত করে এই পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
সেঙফেরোমন ফাঁদ প্রসঙ্গে অপর উপসহকারী উত্তম কুমার জানান, ক্ষতিকর ঔষধ স্প্রে না করে এটি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কীটপতঙ্গ দমন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিক বঙ ব্যবহার করা হয়। যার দুপাশে তিন কোণা ফাঁক থাকে। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকার শরীর থেকে নিঃসৃত এক রকম রাসায়নিক পদার্থ বা স্ত্রী পোকার গন্ধ ব্যবহার করা হয় ফাঁদে। এর আকর্ষণে পুরুষ পোকা ফাঁদের দিকে ধেয়ে আসে এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। এতে করে জমির ফসল নিরাপদ থাকে।
কথা হয় বেতাগী ৮নং ওয়ার্ডের সিরিয়ারমুখ এলাকার কৃষক সৈয়দ আব্দুল আজিজের সাথে। তিনি জানান, মালচিং পদ্ধতিতে এক মাস আগে টমেটো, আলুসহ নানা সবজি আবাদ করেছেন তিনি। আগাছা কিংবা পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষায় এটি কার্যকর পদ্ধতি। যা দেখে আশেপাশের কৃষকরাও উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড তিন সৌদিয়া এলাকার মোস্তাক চৌধুরী জানান, মালচিং পদ্ধতিয়ে এক একর জমিতে তিনি টমেটো ও মরিচ আবাদ করেছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় জমিতে অল্প সেচ, খাদ্য ও কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের দ্বিগুন উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে।
আহমদ আলী নামে এক কৃষক বলেন, অতীতে কীট দমনে ব্যবহার হতো বিষাক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। সেঙফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় জমির ফসল নিরাপদ থাকছে। এছাড়াও রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার ও কেঁচো সার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, প্রান্তিক কৃষকদের সংগঠিত করে জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসম্মত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষক গ্রুপ, উঠান বৈঠকসহ হাতে–কলমে কৃষকদেরকে নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাই গত কয়েক বছর ধরে রাঙ্গুনিয়ায় স্বাস্থ্যসম্মত নানা পদ্ধতি ব্যবহার বেড়েছে। ফসল উৎপাদনের সুফল বুঝতে পেরে কৃষকেরা সহজেই এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে এবং ক্রেতারাও নিরাপদ সবজি পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন বলে তিনি জানান।