নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রোধ করতে হবে অপচয়

| মঙ্গলবার , ২৫ মার্চ, ২০২৫ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বব্যাপী নিরাপদ পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রায় ২.২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এ প্রেক্ষাপটে ‘প্রতিদিন মাত্র ১ লিটার পানি সাশ্রয় করলে বছরে ৩৪৫ বিলিয়ন লিটার পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব’ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে ২২ মার্চ দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও শুষ্ক মৌসুমে যখন পানীয় জলের চাহিদা বেড়েছে, ঠিক তখনই ওয়াসার সবগুলো প্রকল্পের পানির উৎসস্থল কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে সীমাহীন। যা মানব দেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৭৮ গুণের বেশি। যার কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন এখন দৈনিক ৭ থেকে ৮ কোটি লিটার কমে গেছে। এর ফলে নগরীর বিশাল এলাকা জুড়ে পবিত্র এই রমজানে দিনের পর দিন পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ মানব দেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৭ থেকে ৮ গুণ বেশি হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নগরবাসী। এটি মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব আজাদীকে বলেন, অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি খেলে কিডনি বিকল ও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা হবে না। বিশেষ করে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে বলে জানান তিনি।

পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, শিল্প কারখানার দূষিত তরলবর্জ্য, পয়োঃবর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্যে কর্ণফুলী হালদাসহ চট্টগ্রামের খালনদীনালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট বাড়ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানিতে উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে লবণাক্ততার পরিমাণ। চট্টগ্রাম ওয়াসা চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য হালদা ও কর্ণফুলী থেকে তাদের ৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। বর্তমানে হালদা ও কর্ণফুলীর পানিতে প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১০০ মিলিগ্রাম থেকে ২ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, মানব শরীরের জন্য প্রতি লিটার পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা হল ২৫০ মিলিগ্রাম। অথচ বতর্মানে জোয়োরের সময় কর্ণফুলী ও হালদার প্রতি লিটার পানিতে রেকর্ড ২১শ’ থেকে ২৩শ’ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া যাচ্ছে। যা মানব শরীরের সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে সাড়ে ৮ গুণ বেশি।

উল্লেখ্য, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারযোগ্য পানি নিশ্চিত করতে ২০২০ সালে সুয়োমোটো রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেখানে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব কিনা অথবা এ নিরাপদ পানি পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা যায় কিনা এ মর্মে রুল জারি করা হয়েছিল। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে অল্প কয়েকদিন আগে আদালত রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে বলেছেন, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানযোগ্য পানি পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। এ পানির অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আদালত বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক স্থান অর্থাৎ আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেলস্টেশন, হাটবাজার, এয়ারপোর্টসহ প্রত্যেক পাবলিক প্লেসে নিরাপদ পানযোগ্য পানি প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৪০% জনগণ নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করে। এমন পরিস্থিতিতে, পানির সাশ্রয় এবং বনায়ন উদ্যোগের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। বনায়ন সম্পর্কিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বনভূমি মোট ভূমির প্রায় ১৭.% (.৬ মিলিয়ন হেক্টর) জুড়ে বিস্তৃত, যা দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, বনাঞ্চল রক্ষার জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।

পানি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন যদি একজন ব্যক্তি মাত্র ১ লিটার করে পানি বাঁচায়, তাহলে বছরে ৩৪৫ বিলিয়ন লিটার পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব। বিদেশের হোটেলগুলোতে পানির চাপ ০.% নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি আমরা পানির প্রবাহ ৫০% কমিয়ে দেই, তাহলে বিশাল পরিমাণে অপচয় রোধ করা সম্ভব। তাঁরা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর জন্য আমাদের আরও বেশি গাছ লাগাতে হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পানির সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে