নিরাপদ পানি সরবরাহের দায়িত্ব নিতে হবে

| মঙ্গলবার , ২৯ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

পানিই জীবন। আমাদের জীবন ধারণের জন্য মৌলিক যে কতগুলো উপাদান রয়েছে, তার মধ্যে পানি অন্যতম। প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকার জন্য সুপেয় পানি অপরিহার্য। তবে বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পানি, বিপন্ন হচ্ছে জীবন। শুধু তাই নয়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পানি সংকট। পুরনো পাইপ লাইনের কারণে নগরীর অনেক এলাকায় ঠিক মতো পানি পৌঁছে না। আবার কোনো কোনো এলাকায় ওয়াসার পানি যায় নি এখনো। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে গত ২৭ জুলাই। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ও পুরনো ৩০০ কিলোমিটার পাইপ নতুন করে পুনঃস্থাপন এবং ১ লাখ গ্রাহককে ডিজিটাল মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যে গৃহীত চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিডব্লিউএসআইপি) কনসালটেন্ট নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরীর উঁচু এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ৬০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

ওয়াসা সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশনের ১, , ১০, ১১, ১৮, ৩৭ থেকে ৪১ নম্বর এই ১০ ওয়ার্ডে পানির সংকট বেশি। শতাধিক এলাকায় নেই ওয়াসার সংযোগ। বাসিন্দারা গভীর নলকূপ, কেনা পানি, পুকুর ও জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল। এই ওয়ার্ডগুলোর অনেক এলাকায় ওয়াসার সংযোগ তো নেই, আবার অনেক ওয়ার্ড উঁচু এলাকায় হওয়াতে ওয়াসার পুরো পাইপ লাইনের কারণে পানির প্রেসার যায় না। যার কারণে এই ১০টি ওয়ার্ডসহ নগরীর অনেক এলাকায় ওয়াসার মাসের পর মাসবছরের পর বছর পানি পাওয়া যায় না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং সরকার দেবে ৫৭৮ কোটি। এ প্রকল্পে চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে ৭৪ কোটি টাকা। গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। গত ১০ মে চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাাই ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিডব্লিউএসআইপি) এর আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও আইডিএ’র মধ্যে ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের একটি অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পটিকে গত ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হবে। একইসঙ্গে অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অপচয় রোধ, নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি। তিনি বলেন, মহানগরীর পতেঙ্গা, খুলশী, এ কে খান, বায়েজিদ, অক্সিজেন, কালুরঘাট, চাক্তাই এলাকার ৩০০ কিলোমিটার পুরাতন জরাজীর্ণ পাইপলাইন, লিকেজ, ম্যানুয়াল মিটারিং ব্যবস্থা ও অবৈধ সংযোগের কারণে ৪০ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। উক্ত এলাকাসমূহে সুষম চাপে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও পানির অপচয় রোধ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকাসমূহে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ১ লাখ অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৬০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে নগরীর উঁচু এলাকায় পানি পৌঁছানোর উদ্যোগ চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি প্রশংসনীয় দিক। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে নগরীতে পানির সংকট কিছুটা মিটবে বলে আশা করা যায়। তখন নগরীর সর্বত্র সমানভাবে পানি পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তাঁরা বলেন, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পরিসংখ্যান নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। খালুবিলুনদী দখল ও দূষণ, রাসায়নিক ও কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, উপকূলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দেশে নিরাপদ পানির উৎস সংকুচিত হয়েছে। সারফেস ওয়াটারের বদলে মাটির নিচের পানির ওপর বিপজ্জনক নির্ভরতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে নিরাপদ পানির সংকটকে কাজে লাগিয়ে পানির বাণিজ্যিকীকরণ। ফলে চড়া মূল্যে বোতল কিংবা জারের পানি কিনে খাওয়া এখন স্বাভাবিক বাস্তবতা। এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে পানিকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে দেখা বন্ধ করতে হবে। দেশের সব মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সব সেবা সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে