‘বিশ্ব বসতি দিবস’ মূলত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বজনীন একটি দিবস। জাতি সংঘের উদ্যোগে ১৯৮৫ সন থেকে এ দিবসটি প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার উদযাপিত হয়ে আসছে।
বিশ্ববসতি দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো-
বিশ্বের শহর এবং নগর সমূহের অধিবাসীদের নিরাপদ জীবন এবং নিরাপদ বসতি নিশ্চিত করা।
পৃথিবীর সকল নাগরিকের রয়েছে-অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের মৌলিক অধিকার। জাতিসংঘ শহর এবং নগরসমূহে বসবাসরত মানুষের, বিশেষ করে অবহেলিত বস্তিবাসী, নগরবাসী এবং দরিদ্র জনগণের ‘নিরাপদ নিবাস’ অধিকার আদায়ে, তাদের জীবন যাত্রার মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে এই দিবসটি উদযাপিত করে আসছে। এবারের ২০২০ সালের বিশ্ববসতি দিবস- এ জাতিসংঘ ‘Housing for all’-তথা, “সবার জন্য গৃহায়ণ,-একটি উন্নতর নাগরিক ভবিষ্যৎ”- থীম বা প্রতিপাদ্য বিষয়টির তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। এর মধ্যে রয়েছে- নগরবাসীর গৃহায়ণ, সামাজিক সেবা, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাসস্থান নিশ্চিতকরণ, শিশু, যুব, মহিলা, বৃদ্ধ প্রতিবন্ধি এবং অক্ষমদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া; শহুরে নাগরিকদের উন্নতর ভবিষ্যতের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সঞ্চলিত একটি আবাসগৃহ নিশ্চিত করা।
এবারের প্রতিপাদ্যের উদ্দেশ্যাবলী সময়ের নিরীখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবাসন বা বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি, যার অভাব নগরজীবনে তীব্রভাবে অনুভূত হয়। প্রতিদিন নগর কেন্দ্রগুলোতে ভাগ্যেন্নেষণে, কাজের সন্ধানে, জীবিকার প্রয়োজনে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র এবং অরক্ষিত নগরবাসীকে বিশেষত: নারী, উদ্বাস্তু, অক্ষম ব্যক্তিবর্গ, বৃদ্ধ, তরুণ, এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে অনিশ্চিত, মৌলিক সুযোগসুবিধাবিহীন নগর কেন্দ্র হতে বহুদূরে বস্তি কিংবা অস্থায়ী, নিরাপত্তাহীন অতিনিম্নমানের বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এতে তারা জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ অথবা গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতেও থাকছে।
২০২০ সনের গণনানুয়ায়ী পৃথিবীর জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৭৮০ কোটি। এক পরিসংখ্যনে দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপি প্রায় ২০০ কোটি মানুষ বাস করে অপর্যাপ্ত বাসস্থানে যার মধ্যে বিশকোটি পুরোপুরি গৃহহীন হিসেবে চিহ্নিত। এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫০ কোটি মানুষ বস্তিতে বাস করে, যা বিশ্ব বস্তিবাসীর ৬০% শতাংশ। আগামী দুই দশকে বিশ্ব বস্তিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে প্রায় ২০০ কোটিতে। প্রায় ৮০০ কোটির এই বিশাল মানব জাতির অন্ন এবং বস্ত্রের যোগান দিতে গিয়ে আমাদের পৃথিবী আজ পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন। কেবলমাত্র খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনেই পৃথিবীর নির্মল জলাভূমি, বিশাল বিশাল বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। সেই সাথে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মানুষসহ পশুপাখীর নিরাপদ আবাস ও আশ্রয়স্থল। জীবিকার সন্ধানে মানুষ ছুটে আসছে নগর-বন্দরে, সেখানেও নেই শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষের এতটুকু নিরাপদ আবাসন, নিরাপদ জীবন।
বিশ্বের বিভিন্নদেশের সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সেক্টর এবং মিডিয়া’র মাধ্যমে এই দিবসটি নানান আঙ্গিকে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের দৃষ্টিতে ‘সুগৃহায়ণ হচ্ছে সমাজের দারিদ্র্যতা নির্মূলের প্রভাবক’। সুগৃহ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে, সবার নিরাপদ এববং স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করে,, হ্রাস করে রোগ ব্যাধি, অকাল মৃত্যু, উন্নত করে আর্থসামাজিক স্থায়িত্ব এবং বৃদ্ধি করে গৃহসামগ্রী এবং জাতীয় আয়।
জাতিসংঘ ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ এর মাধ্যমে আগামীর ভয়াবহ ‘বসতি সমস্যার প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আমাদের মনে রাখা উচিত- আদর্শ জীবন যাত্রার জন্য সবার কাছে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের মৌলিক অধিকার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন ও আদর্শকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণীত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অচিরেই একটি আদর্শ বাসযোগ্য নিরাপদ নিবাস-এ পরিণত হবে।
লেখক: জাইকা’র চট্টগ্রাম উপকূলের পরিবেশ বিষয়ক প্রাক্তন কনসালটেন্ট এবং ডি এফ আই ডি চট্টগ্রামস্থ জাহাজ ভাঙা শিল্পের পরিবেশ বিষয়ক প্রাক্তন প্রধান গবেষক।