নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল চবি

ছাত্রী হেনস্তার প্রতিবাদ, দফায় দফায় মানববন্ধন

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২২ জুলাই, ২০২২ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানে ছাত্রী হেনস্তার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অনেক শিক্ষক অংশ নেন। এরপর বেলা সাড়ে বারোটায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয় একই জায়গায়। বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী আজাদীকে বলেন, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নিকটেই একজন শিক্ষার্থী নিরাপদ না, এটা খুবই দুঃখজনক। প্রশাসন সেটার বিচার না করে উল্টো ১০টার মধ্যে হলে ঢোকার নির্দেশ দিচ্ছে, তাহলে বুঝা যাচ্ছে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার কারণ হলো বিচারহীনতা। আর শক্তিশালী একটি মহল বার বার তাদের সমর্থন করছে।

আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে অনেক বিভাগ ক্লাস বর্জন করেছে। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা বিজ্ঞান অনুষদ থেকে মিছিলটি শুরু করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রী হেনস্তার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর কোনো বিচার করছে না। বিপরীতে ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের নিজেদের ক্যাম্পাসেই নিরাপদ নয়। আমরা এই ২১শ একর ক্যাম্পাসে আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা চাই। সেই সঙ্গে ছাত্রী হেনস্তার তদন্তপূর্বক সঠিক বিচার চাই। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। এ সময়, ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি?, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই, নাম অবশ্যই প্রশাসনের জানা, তবে মামলা কেন অজ্ঞাতনামা- এ সব স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড লিখে প্রতিবাদ জানান তারা।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ ইমন বলেন, আমরা গতকাল (বুধবার) রাতে ছাত্রীরা যে ৪ দফা দাবি জানিয়েছে, সে দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর সঙ্গে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের বিষয়ে প্রশাসনকে নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এর আগে গত বুধবার (২০ জুলাই) রাতে চার দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেন ছাত্রীরা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২৪ ঘণ্টা ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মেডিক্যাল ও আবাসিক হলে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা না রাখা। যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙে নতুন কার্যকরী যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করা এবং গঠিত সেলে বিচার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ সময় থাকবে এক মাস করা। এক মাসে বিচার নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ হলে যৌন নিপীড়ন সেল নিজে শাস্তির আওতাভুক্ত হবে। চার কর্মদিবসের মধ্যে ছাত্রী হেনস্তায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করবেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে লিখিত আশ্বাস দিতে হবে। এ সব দাবি মেনে নিলে হলে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ ও শাখা ছাত্রদল। দুপুর দুইটার দিকে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সিএফসি মানববন্ধন করেছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা। বিচার দাবি করে শহরে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রদল। এ ছাড়া দ্রুত বিচার দাবি করে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে শাখা ছাত্রলীগের একাংশ (আ জ ম নাছির অনুসারী)। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে তারা এ বিক্ষোভ করেন।

মূলত গত রোববার (১৭ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন এক ছাত্রী। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা তার বন্ধুকেও মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন। পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিলে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাদী হয়ে মামলাও করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। যৌন নিপীড়নের এ ঘটনার জেরে ছাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের হলে প্রবেশের ব্যাপারে সময়সীমা বেঁধে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

প্রশাসনের বক্তব্য : এখন পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করা হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, সার্বিক বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এটা নিয়ে আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। আশা করি বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আমরা এটা সমাধান করতে পারবো।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মনিরুল হাসান বলেন, এ রকম ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এটার বিচার করবোই। আগে কে কি করেছে, কে কি বলেছে আমি জানি না, আমি বলছি আমরা এটার বিচার করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদের মেয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে, শাস্তি হবেই : চবি উপাচার্য
পরবর্তী নিবন্ধনগরীতে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন