নিরাপদ ও সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য-শিক্ষাবান্ধব ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ নান্দনিক পর্যটন নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে ৯টি খাতে গৃহকর সহনীয় রাখা, মশক নিধন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, হকার পুনর্বাসন, ফুটওভারব্রিজ স্থাপন এবং যানজটমুক্ত শহর করে নগরবাসীর জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ ৭৫টি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইশতেহারের স্লোগান করা হয়েছে, ‘চলো সবাই বাধো জোট, এবার দেবো আমার ভোট’। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন ডা. শাহাদাত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল।
আমীর খসরু বলেন, জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া মানে আপনার ভোট কেড়ে নেয়া। আপনার আত্মীয়স্বজনদের ভোট কেড়ে নেয়া। অন্তত চট্টগ্রামবাসী যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।
শাহাদত হোসেন বলেন, নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে অবাস্তব প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নয়, প্রয়োজন ত্রুটিহীন পরিকল্পনা, বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতা, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর যৌক্তিক আকাঙ্ক্ষা এবং সততা ও দুর্নীতিমুক্ত মানসিকতা। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনই পারে বিদ্যমান উন্নয়ন অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয় সাধন করে নগরবাসীর দোরগোড়ায় উন্নয়ন পৌঁছে দিতে। আমাকে নির্বাচিত করলে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে এ প্রচেষ্টায় সফল হব ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, মানব সেবার অন্যতম মাধ্যম চিকিৎসাসেবাকে নিয়েছি পেশা হিসেবে। রাজনীতি করছি অসহায় আর নিপীড়িত জনতার পাশে থাকতে। রাজনীতিতে নিজেকে নেতা নয়, কর্মী মনে করি। এবার ‘নগর পিতা নয়, আমি নগর সেবক হতে চাই’।
‘অবৈধ দখল উচ্ছেদ, স্বজনপ্রীতি মুক্তকরণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসন চ্যালেঞ্জ উত্তরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’ জানিয়ে বলেন, একটি পরিচ্ছন্ন নগর এবং নগরবাসীর উন্নত জীবন গড়তে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ, নাগরিক বিনোদন, কর্মসংস্থান, পরিবেশ দূষণ ও ভেজালমুক্তকরণ, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজমুক্তকরণ, সর্বপ্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি কর্পোরেশনের সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সুষম বণ্টন এবং নগরবাসীকে অন্যায্য কর আরোপ হতে ভারমুক্ত রাখার উদ্যোগ নেব।
জলাবদ্ধতা : জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়তে খাল উদ্ধার করে খনন ও খালের উভয় পাশ রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ, প্রতি বছর বর্ষার আগে খাল, নালা-নর্দমা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারসহ পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা, নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পুরাতন ড্রেনগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আধুনিক ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি আছে ইশতেহারে।
১৯৯৫ সালে প্রণীত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), কুয়েত ফান্ড ও জাইকা থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়, ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের সময় ইউএনডিপির সহায়তায় নালা-নর্দমা সংস্কারের যে মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তা বন্ধ করে দেয়। এটার পুনর্বাস্তবায়ন করা হবে।
ডা. শাহাদাত বলেন, অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি মাটি পড়ে খাল ও নালা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে তা খালে গিয়ে পড়ে। তা নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাহাড় কাটা বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্যখাতে ১৫ প্রতিশ্রুতি : স্বাস্থ্যবান্ধব নগরী গড়তে শিশু হাসপাতাল, মাতৃসদন ও ট্রমা সেন্টার, বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ ১৫ প্রতিশ্রুতি আছে ইশতেহারে। এছাড়া চসিকের আওতাধীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ, মেমন মাতৃসদন এবং চসিক জেনারেল হাসপাতালকে আধুনিকায়ন ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, মোবাইল মেডিকেল ইউনিট স্থাপনে প্রতিশ্রুতি দেন শাহাদাত।
তিনি বলেন, নগরের জনসংখ্যা গত ৫০ বছরে প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেলেও নতুন কোনো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় শয্যা সংখ্যার অপ্রতুলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়াতে আরো দুই হাজার শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
ইশতেহারে কোভিড-১৯ সহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে বিশ্বমানের পর্যাপ্ত পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা, চসিক পরিচালিত জেনারেল হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের জন্য স্বল্প খরচে চিকিৎসায় আলাদা ক্যান্সার বিভাগ চালু, কিডনি ডায়ালিসিস মেশিন স্থাপনসহ কম খরচে হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা, চসিক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব বিশেষ সেল গঠন, নারীদের মাতৃত্বকালীন ও শিশুদের পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ ‘রিমোট ও ভার্চুয়াল’ সেবা প্রদান, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ওল্ড এজ কেয়ার হোম তৈরি করে সেখানে সকল প্রকার বার্ধক্যজনিত জটিল রোগের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা, নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা এবং পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট তৈরি, স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, শিশু সুরক্ষা, ও স্যানিটেশনের সেবা নিশ্চিত, খাদ্য নিরাপত্তায় খাদ্যে রাসায়নিক প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ, বাজারে আনীত কাঁচা সবজি, মাছ, ফলমূল ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত রাখতে মনিটরিং সেল, খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষাগার স্থাপনেও প্রতিশ্রুতি আছে।
ইশতেহারে বলা হয়, প্রতি ওয়ার্ডে নিরাপদ সুপেয় পানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। চসিকের লাশবাহী গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করে ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আনা হবে এবং মুক্তিযোদ্ধা, গরিব ও অসহায়দের এ সেবা বিনামূল্যে দেয়া হবে। চসিক এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। পর্যাপ্ত ব্যায়ামাগার ও জগিং ট্র্যাক স্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডি পূর্ণাঙ্গ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মশক নিধন : মশক নিধনে গতানুগতিক ওষুধ ছিটানোর পরিবর্তে আধুনিক বিশ্বে প্রচলিত ‘বায়োলজিক্যাল মেথড’ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাহাদাত বলেন, গত কয়েক বছরের ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ও মশক নিধনে চসিক চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম : পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে গতি আনতে নগরের প্রতিটি ঘর থেকে আবর্জনা সংগ্রহের ব্যবস্থাসহ একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি আছে ডা. শাহাদাতের। এর মধ্যে পরিচ্ছন্ন বিভাগে লোকবল বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন, ডাস্টবিন আধুনিকায়ন করা, বাসা-বাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থাসহ বর্জ্যকে রিসাইক্লিং করে কৃষি কাজে ব্যবহারের উপযোগী করা, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি আছে।
তিনি বলেন, সেবক হিসেবে পরিচ্ছন্নতা নির্বাচিত মেয়রের অন্যতম প্রধান কাজ। পরিবেশবান্ধব নান্দনিক পর্যটন নগরী গড়তে পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। নির্বাচিত হলে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিকায়ন করা হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
গৃহকর ও আবাসন : বর্তমান গৃহকরের প্রয়োজনীয় বিন্যাস ও সরলীকরণ করাসহ সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং নিম্ন আয়ের নগরবাসী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের আবাসন গৃহকরমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ইশতেহারে। এছাড়া ভাসমান হকার, হিজড়া, ভবঘুরে ও ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন এবং শ্রমজীবীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে আবাসন সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নেয়ার অঙ্গীকার করেন।
শিক্ষাবান্ধব চট্টগ্রাম : চসিকের অন্যতম সমৃদ্ধ বিভাগ শিক্ষা। নির্বাচিত হলে বিভাগটির ওপর ভর করে শিক্ষাবান্ধব চট্টগ্রাম গড়তে ১৫টি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন ডা. শাহাদাত। এর মধ্যে রয়েছে পুরো বিভাগকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় এনে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় কার্যক্রম মোবাইলের মাধ্যমে মনিটরিং করা, উচ্চ শিক্ষায় মেধাবীদের বিশেষ সহযোগিতা প্রদান, চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ফলাফল মানের ভিত্তিতে পরবর্তীতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্টাফ নিয়োগে অগ্রাধিকার প্রদান, ত্রৈমাসিক অভিভাবক সমাবেশ করে সচেতনতা সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে নেতৃত্ব ও গুণাবলী অর্জনের নিমিত্তে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া, চসিকের আওতাধীন কারিগরি, কম্পিউটার ইনস্টিটিউটসহ প্রতিটি ভোকেশনাল সেন্টারসমূহে ভর্তির সুযোগ বৃদ্ধি, কর্পোরেশন পরিচালিত মাধ্যমিক স্কুলসমূহে কারিগরি শিক্ষা চালু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রাপ্য স্বল্প সময়ে প্রদান, এলাকাভিত্তিক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা, চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি ও লেখাপড়ার সুযোগ প্রদান, নিম্ন আয়ের লোকদের সন্তানসহ বস্তিবাসীর সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে চসিক পরিচালিত স্কুলগুলোতে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা। এছাড়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে কর্পোরেশন পরিচালিত উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি নির্দেশনার আলোকে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি আছে।
নিরাপদ চট্টগ্রাম : ইশতেহারে নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়তে নানা অঙ্গীকার আছে। এর মধ্যে আইটি কমান্ড সেন্টার তৈরির করে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় চসিকের নিজস্ব তহবিল এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় পর্যাপ্ত স্কুল ও সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণে প্রতিশ্রুতি আছে। এছাড়া নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইন-শৃক্সখলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার উদ্যোগ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য রাস্তার সাথে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ফুটওভারব্রিজ স্থাপন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের জন্য বিকল্প বসবাসের উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি আছে।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে মাদকাসক্তি ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে বলা হয়, মাদক বিরোধী কার্যক্রম জোরদারসহ এলাকাভিত্তিক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র চালু করা হবে।
সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের হাজার বছরের ঐতিহ্যের আলোকে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াস থাকবে উল্লেখ করে ইশতেহারে বলা হয়, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গীর্জা, কবরস্থান, শ্মশান ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
নান্দনিক পর্যটন নগরী : পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে একটি আধুনিক আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ১৭টি প্রকল্প প্রণয়ন করে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, নগরের দিঘি ও লেকসমূহকে পর্যটন স্পটে পরিণত করা, এলাকাভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন উন্মুক্ত পার্ক নির্মাণের অঙ্গীকার আছে।
সড়ক ব্যবস্থাপনা : যানজট নিরসনে উন্নত বিশ্বের অনুকরণে বাইপাস সড়ক নির্মাণ, গণপরিবহনে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, নগরে বাযু দূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু, পরিকল্পিত স্মার্ট বাস স্টপ নির্মাণ, সাইকেলের জন্য আলাদা লেইন ও সাইকেল পার্কিং ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, বহুতল পার্কিং স্থাপন এবং ধীর গতির বাহনের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আলাদা লেন করার উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রতি আছে ইশতেহারে।
তথ্যপ্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারে আইটি পার্কসহ আইটি উপ-শহর গড়ে তোলার পাশাপশি অ্যাপস-এর মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকিসহ সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ, নগরীতে বিদ্যমান মাদ্রাসা ও এতিমখানাসমূহে শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও কম্পিউটার শিক্ষার উদ্যোগ, নগর ভবন, প্রত্যেক ওয়ার্ড অফিস ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযোগ বক্স স্থাপন, কর্পোরেশনভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই চালু, ফোরকানিয়া মাদ্রাসাসমূহ আধুনিকায়নসহ পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা ভাতা প্রদান, মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও কম্পিউটার শিক্ষার অধীনে আনা, অনলাইন পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স ফি ও সাইনবোর্ড ট্যাক্স সরলীকরণ করাসহ যাবতীয় কর ও সেবা অনলাইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি আছে।
অন্যান্য : নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা করে আয়বর্ধক প্রকল্প বৃদ্ধিসহ বন্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহ চালু করে লাভজনক করা, চসিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি, পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম স্থাপন এবং খেলাধুলার জন্য এলাকাভিত্তিক পর্যাপ্ত মাঠ তৈরি, তরুণ শিক্ষিতদের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগ গ্রহণ প্রকল্প সৃষ্টি, নগরের যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের প্রতিশ্রুতি আছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় এবং দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থার প্রদত্ত সম্পদ শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে ব্যবহার নিশ্চিত, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কর্পোরেশনের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করাসহ চসিককে দুর্নীতিমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন ডা. শাহাদাত।
ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, অ্যাডভোকেট বদরুল আলম, নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক একরামুল করিম, সদস্য সচিব নসরুল কদির, আহমেদ খলিল খান, ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, জাহিদুল করিম কচি, জালাল উদ্দিন মজুমদার, হারুনুর রশীদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, এম এ আজিজ, এস কে খোদা তোতন, সফিকুর রহমান স্বপন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন ও আব্দুল মান্নান।