নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হলো। এই সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা অনেক। ফলে সব প্রত্যাশা পূরণ তাঁদের জন্য ততো সহজও নয়। সঙ্গত কারণেই বলা যায়, তাদের সামনে চ্যালেঞ্জও অনেক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেশিরভাগ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। তারা মনে করে সরকার জনগণের ভাষা বুঝে জনপ্রত্যাশা পূরণে যথাযথ ভূমিকা রাখবে। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং আমরা মনে করি, সেটাই যথার্থ। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ হলো, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে জনমনে স্বস্তি আনা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা কঠিন হবে। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের অর্জিত ফসলের পরিপ্রেক্ষিতে এ সরকারের যাত্রা হয়েছে। জননিরাপত্তা রক্ষায় মানুষ আজ বহুমুখী হুমকির সম্মুখীন। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও তার পরবর্তী সময়ে জননিরাপত্তা বিষয়ে কমবেশি সবাই উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের ফাঁকে স্বার্থান্বেষী মহল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এরা দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সেসময় থেকে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সর্বপ্রকার নৈরাজ্য রোধ পূর্বক সর্বস্তরের জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন করে সাজিয়ে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ, উপাসনালয় ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসতে হবে। এ দেশকে ও দেশের মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। চলমান পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিককেও সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। আন্দোলনের সফল অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। এই দেশ বিরোধীদের রুখে দিয়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করতে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে।
আমাদের দেশে পুলিশ বাহিনীকে সবকিছু সামাল দিতে হয়। কিন্তু সব অনৈতিক, অবক্ষয়, অপচয়, দুর্নীতি, সহিংসতা, পারিবারিক সংঘাত, শিশুহত্যা, নারী ধর্ষণ, গুম, হত্যা, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, বাজার অব্যবস্থা, পরিবেশ বিপর্যয়, ইত্যকার সবকিছুই কি একা পুলিশ বাহিনীর সামাল দেওয়া সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে যদি সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হয় বা গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তখন পুলিশ বাহিনীর পক্ষেও যত শক্ত সামর্থ্যবান অবস্থা নিয়েই থাকুক না কেন, তার পক্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। পুলিশ বাহিনী তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ও সেবার মহান ব্রতকে ভুলে যায় আর তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যদি ফাটল দেখা যায় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসময় সামাজিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে বাধ্য; নাগরিক নিরাপত্তা এবং জনকল্যাণ হবে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত। তাঁরা বলেন, ব্যক্তিনিরাপত্তা নিয়ে যদি আলোচনা করা যায়, প্রথমেই উঠে আসবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর ব্যাপক দুর্নীতি। এ দুটি ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রযন্ত্র তথা রাজনৈতিক ব্যবস্থা গত দুই দশকে ব্যক্তিনিরাপত্তা আশানুরূপভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে আশার কথা এই যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে এক্ষেত্রে মনোযোগী দেখা যাচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের হলেও সমাজ–সচেতন না হলে এ নিশ্চয়তা সম্ভব নয়। সমাজ–সচেতনতার জন্য প্রয়োজন সামাজিক জাগরণের। সামাজিক জাগরণের অভাবে ধর্ষণ, গুম আর হত্যার মধ্যে নাগরিক নিরাপত্তা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। সরকার তথা দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের প্রধান দায়িত্ব জাতীয় নিরাপত্তা তথা অপ্রচলিত নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা জোরদার করা। আরও প্রয়োজন অধিকতর সুশাসনের জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা। সহিংসতা কিংবা জনবৈরী যেকোনো কর্মকাণ্ড শান্তির বড় অন্তরায়। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা মনে করি। বিশেষজ্ঞদের মতো সকলেই আশা করছেন, জননিরাপত্তা নিয়ে নাগরিকসমাজে যে শঙ্কা বিরাজ করছে এর নিরসনে দ্রুত সব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা হবে। জনসাধারণ কোনোপ্রকার অশান্তি দেখতে চায় না। তাই জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দ্রুত সব ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয়।