নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন

| মঙ্গলবার , ২০ মে, ২০২৫ at ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান বলেছেন, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে তিনি নির্দেশনা প্রদান করেন।

চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে গত শনিবার আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পুলিশম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে তিনি সভাপতির বক্তব্য রাখছিলেন। ১৮ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, কনফারেন্সের শুরুতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান বিগত সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো দূর করতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি থানার অফিসার ইনচার্জদের তদন্ত করার সময় মামলার আলামত যথাযথভাবে জব্দ করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাদের আরো প্রশিক্ষিত হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি দ্রুত ও দক্ষতার সাথে প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করেন। কনফারেন্সে আগত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের প্রতিনিধি জানান, এখন থেকে রেকর্ড দেখে মেডিকেল সনদ প্রদান করা হবে এবং ডাক্তার সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য একজন ফোকাল পার্সন নিয়োগ করা হবে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা প্রতিরোধমূলক। তাই ৫৪ ধারার ব্যবহার কম করতে হবে। রিমান্ড শুনানির সময় তদন্তকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

তবে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় বলে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি জাতীয় বার্তা। কেননা, অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা, পূর্বশত্রুতা, চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককে আসামি করা হচ্ছে। এদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। মামলার বাদী আবার এসব নারী আসামিকে চেনেনও না। মামলার এক নারী আসামিকে পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাজানো ঘটনায় চট্টগ্রামঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে। একেক মামলায় শত শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ধরনের মামলা এখনো হচ্ছে। এসব মামলার আসামি হচ্ছেন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও নাগরিক আন্দোলন কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। দেশের জনগণের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। এইসব মামলার রাজনৈতিক নেতা ছাড়া অন্য যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই জানেন না যে তারা আসামি।

তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে বলেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। একই সঙ্গে সঠিক তথ্য প্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাচাইবাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো সরকারকে সমর্থন বা বিরোধিতা করা নাগরিকের একান্তই তাঁর নিজস্ব বিষয়। দেখতে হবে তিনি কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করে কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়েছেন কি না। যদি জড়িত হয়ে থাকেন, তথ্য প্রমাণসহ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতে হবে। আর যদি কোনো অপরাধে জড়িত না হন, তাহলে ঢালাও মামলায় তাকে জড়ানো হবে কেন?

অনেক মামলার বাদী বলেছেন, তিনি আসামিদের চেনেন না। এর অর্থ এসব মামলায় যাঁদের বাদী করা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মামলা করেছে। ভুক্তভোগী পরিবার বা স্বজনেরা মামলা করলে তাঁরা আসামিকে চিনতেন।

নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই শুধুমাত্র প্রকৃত অপরাধী শনাক্তকরণ, বিচারের আওতায় আনা জরুরি। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যাতে কোনোভাবে হয়রানির সম্মুখীন না হন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে পুলিশকে। হত্যা, দুর্নীতিসহ সব অপরাধের বিচার হোকসেটা সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু অপরাধীকে শনাক্ত না করে নিরপরাধ ব্যক্তি যদি হয়রানির শিকার হন, তাহলে ন্যায়বিচারের পথও রুদ্ধ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে