নিয়ম ভাঙায় ভবনটিকে আগেও জরিমানা করা হয়েছিল

বেইলি রোডের ট্রাজেডি চিকিৎসাধীন ৫ জন, ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে রিট

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৪ মার্চ, ২০২৪ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

ভবন তৈরিতে অনিয়মের কারণে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ২০১৯ সালে অভিযান চালিয়েছিল রাজউক। সে সময় ওই ভবনের অননুমোদিত অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সাততলা ওই ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরো অন্তত এক ডজন মানুষ।

ওই অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস জানায়, ভবনটিতে অগ্নিনির্গমন পথ ছিল না। ভবনের সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডারসহ নানা ধরনের মালামাল রাখা ছিল। ফলে নিচতলায় যখন আগুন লাগল, ওই সিঁড়ি ব্যবহার করে নামতে পারেনি মানুষ। উপরে আটকা পড়ে ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় অধিকাংশের মৃত্যু হয়। খবর বিডিনিউজের।

রাজউক জানিয়েছে, ভবনটিতে অফিস করার অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল; রেস্তোরাঁ করার জন্য নয়। অথচ গ্রিন কোজির বিভিন্ন ফ্লোরে গোটা দশেক রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান ছিল। নিচতলার একটি চাকফির দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম গতকাল বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করায় ওই ভবনকে নোটিস দেওয়া হয়েছিল, পরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। ওই ভবনটি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়নি। এছাড়া তারা কিছু আনঅথোরাইজড কনস্ট্রাকশন করেছিল। এ কারণে আমরা অভিযান চালিয়ে ওই অংশটুকু ভেঙে দিই।

রাজউক জানিয়েছে, ২০১১ সালে গ্রিন কোজি কটেজ বেইজমেন্টসহ আট তলার অনুমোদন নেওয়া হয়। আবাসিককাম বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া ওই ভবনটির নিচতলা থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক এবং উপরের অংশ আবাসিক ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। ভবনের কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে।

রাজউকের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই ওই ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এ কারণে ভবন মালিককে ২০১৯ সালে নোটিস দেওয়া হয়। ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ভবনের কিছু অংশ ভেঙে দেয় রাজউক। ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো ভবন নির্মাণ করা হলে সেটি ব্যবহার বা বসবাসের আগে ব্যবহার সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে হয়। একটি ভবন সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কিনা, ভবনটি ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কিনা, সেটি নিশ্চিত করার জন্যই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট।

আরেকজনের লাশ হস্তান্তর : অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো আরেকজনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রমনা মডেল থানার এসআই রাজিব হাসান জানান, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহসহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে কে এম মিনহাজ উদ্দিন (২৫) নামে একজনের লাশ শনিবার রাতে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ নিয়ে ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ৪৪ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হলো। এর বাইরে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামের যে নারী সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে, পরিচয় জটিলতায় তার লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। বাকি একজনের পরিচয় এখনও অজানা।

অগ্নিকাণ্ডে আহতদের মধ্যে বর্তমানে পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তাদের মধ্যে রাকিব (২৫), মেহেদী হাসান (৩৫) ও তার স্ত্রী সুমাইয়া আকতার (২৫) শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। আর জুবায়ের আহামেদ (২৫) ও ইকবাল হোসেন (২৩) নামের দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে রিট : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত এবং হতাহতদের ক্ষতিপূরণসহ কয়েকটি নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। তিনি বলেন, সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চে রিট আবেদন শুনানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, রিটে বেইলি রোডসহ সব আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ, বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রকৃত দায়ীদের গ্রেপ্তার, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত এবং হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫ বছর পর সেন্টমার্টিন উপকূলে ধরা পড়ল ঘোড়া মাছ!
পরবর্তী নিবন্ধচুয়েটে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন