নগরের চকবাজার গুলজার মোড় থেকে প্যারেড মাঠ সংলগ্ন কেয়ারি ইলিশিয়াম মার্কেট। গুগল ম্যাপ অনুযায়ী এ পথের দূরত্ব ১৯০ মিটার বা ৫০০ হাতেরও কম। স্বল্প দূরত্বের এ পথের একপাশে (গুলজার থেকে কেয়ারিমুখী অংশ) ১১ জন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক তাদের খালি রিকশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন যাত্রীর জন্য। এর বাইরে কেয়ারির সামনেও বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা গেছে। সড়ক দখল করে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাখায় সেখানে সৃষ্টি হয় যানজট।
এ দৃশ্য দেখা গেছে গতকাল সন্ধ্যায়। অবশ্য সড়কটির এ চিত্র রোজকার। অথচ প্রায় তিন মাস আগে প্রস্তুতকৃত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না এমন সড়কের তালিকায় গুলজার থেকে কেয়ারি অংশটিও রয়েছে। শুধু সড়কটি নয়, নগরের প্রধান সড়কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতেও ব্যাটারিচালিত রিকশা না চালানোর বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিএমপি’র নির্দেশনা আছে। কিন্তু সে নির্দেশনা মানছেন না ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। সারা শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের উপস্থিতিতে বৈঠকে যানজট নিরসনে প্রধান সড়কসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় কোন কোন সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না তাও নির্ধারণ করা হয়। সভায় সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না এমন সড়কগুলো নির্ধারণ করা হয়। ওই বৈঠকের পর প্রায় তিন মাস পেরুলেও নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, ব্যাটারিচটালিত রিকশা মূল সড়কে চলতে পারবে না নির্দেশনা আছে। তারা যদি না মানে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসি ট্রাফিককে বলব। ট্রাফিক বিভাগকে স্ট্রংলি বলব মূল সড়কে আসলে যেন গাড়িগুলো জব্দ করা হয় এবং শাস্তির আওতায় আনা হয়। ব্যাটারি রিকশা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক বিভাগের মোবাইল টিম এ মুহূর্তে জরুরি।
মেয়র বলেন, আমি নিজেও গতকাল (বৃহস্পতিবার) লালখান বাজারে ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখেছি। তখন তাদের থামিয়ে মূল সড়কে না চালানোর জন্য বলেছি।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক বিভাগের চারটি জোনে ভাগ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না এমন সড়কের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে সিএমপি’র ট্রাফিক উত্তর জোনের আওতাভুক্ত সড়কগুলো হচ্ছে– কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট হয়ে দামপাড়া পুনাক ক্রসিং পর্যন্ত এবং ষোলশহর ২নং গেইট থেকে প্রবর্তক মোড় ও গোলপাহাড় হয়ে জিইসি পর্যন্ত এবং জাকির হোসেন রোডে ওয়ারলেস মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত।
ট্রাফিক দক্ষিণ জোনের আওতাভুক্ত সড়কগুলো হচ্ছে– দামপাড়া পুনাক থেকে টাইগারপাস হয়ে নিউ মার্কেট কোতোয়ালী, নিউ মার্কেট থেকে জুবিলি রোড কাজীর দেউড়ি, আলমাস হয়ে ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার থেকে জামাল খান হয়ে আন্দরকিল্লা মোড়, গনি বেকারি মোড় হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ, কেয়ারি মার্কেট, গুলজার মোড়, অলি খাঁ মোড়, চট্টগ্রাম মেডিকেল জরুরি বিভাগের গেইট পর্যন্ত।
ট্রাফিক পশ্চিম জোনের আওতাভুক্ত সড়কগুলো হচ্ছে– দেওয়ানহাট হতে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, এঙেস রোড, ডি টি রোড।
বন্দর জোনের আওতাভুক্ত সড়কগুলো হচ্ছে– বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, কর্ণফুলী টানেল গোল চত্বর, আকমল আলী রোডের মাথা এবং লিংক রোডের প্রধান সড়ক।
এদিকে গত তিনদিন নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, চলতে পারবে না নির্দেশনা আছে এমন প্রায় প্রতিটি সড়কেই চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাস্তার মাথা থেকে সিএন্ডবি, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেটে গতকাল দুপুরেও ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা গেছে। গুলজার মোড় থেকে চট্টগ্রাম কলেজ হয়ে গণি বেকারি পর্যন্ত সড়কজুড়ে দাপট থাকে ব্যাটারি রিকশাচালকদের। আন্দরকিল্লা মোড়ে সারা দিনই যানজট লেগে থাকে ব্যাটারি রিকশার।
চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত নগরের সিরাজদ্দৌলা রোডে যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসড়কের বিভিন্ন অংশে উল্টো পথে চলে এসব রিকশা। এর মধ্যে দিদার মার্কেট, সাব–এরিয়া, চন্দনপুরা এঙেস রোডের মুখে উল্টো পথে চলে ব্যাটারিচালিত রিকশা।
গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় দুই নম্বর গেটে কথা হয় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক সজীবের সঙ্গে। আজাদীকে তিনি জানান, কোন কোন সড়কে চলতে পারবে না এমন নির্দেশনা তার জানা নেই। তবে প্রধান সড়কে চালালে অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ রিকশা জব্দ করে নিয়ে যায়, জরিমানা করে। তাই প্রধান সড়ক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
জামালখান মোড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ইসকান্দর বলেন, জামালখান কি মেইন (প্রধান) সড়ক? এখানে চালাতে না পারলে চালাবো কোথায়, পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি? শেষে বলেন, শখে কি আর রিকশা চালাই, পেটের দায়ে চালাতে হয়। মাঝেমধ্যে পুলিশে ধরে, জরিমানা করে, গাড়ি আবার ছাড়িয়ে আনি।