নিবিড় তদারকিতে বন্দরে গতি

তিন মাস ৪৪৬টি জাহাজের অধিকাংশই সরাসরি ভিড়ছে জেটিতে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

নিবিড় তদারকি চট্টগ্রাম বন্দরের গতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করেছে। জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। সিঙ্গাপুর বা কলম্বোর মতো বন্দর যেখানে জট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশ থেকে আসা অনেক জাহাজ সরাসরি বার্থিং নিচ্ছে। গত প্রায় তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিংকৃত ৪৪৬টি জাহাজের উপর পরিচালিত সমীক্ষা শেষে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অধিকাংশ জাহাজই কোনো ধরনের অপেক্ষা ছাড়াই জেটিতে বার্থিং নিয়েছে।
বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জটমুক্ত বন্দর হলে কম ভাড়ায় জাহাজ পাওয়া যায়। আবার জটের কারণে কনজেশন সারচার্জ আরোপের মতো ঘটনা ঘটে। জটের কবলে পড়া বন্দরে অনেক শিপিং কোম্পানি জাহাজ পাঠায় না। চট্টগ্রাম বন্দরে একসময় ভয়াবহ জট থাকত। জটের কারণে বাড়তি জাহাজ ভাড়া গুনতে হতো আমদানিকারকদের। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নানা পদক্ষেপের ফলে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর শুধু জটমুক্ত নয়, বিদেশ থেকে আসা জাহাজ সরাসরি জেটিতে ভিড়ার পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, করোনাকালে কয়েক মাস আগেও বন্দর পরিস্থিতি নাজুক ছিল। বিশেষ করে ঈদের ছুটি, লকডাউন, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, খালি কন্টেনারের অভাব, বেসরকারি আইসিডি থেকে পণ্য সরবরাহে সংকট, প্রাইমমুভার ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কারণে বন্দরে দেখা দিয়েছিল কন্টেনার জট। জটের কারণে জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাসে তৈরি হয়েছিল অচলাবস্থা। বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার স্থানাভাব দেখা দিয়েছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহায়তায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। বিশেষ করে আমদানিকৃত শতভাগ পণ্য বেসরকারি আইসিডি থেকে খালাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগে আইসিডি থেকে ৩৮ ধরনের পণ্য খালাস হতো। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। একই সাথে জাহাজের বার্থিং সুবিধা বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর চেয়ারম্যান, বোর্ড মেম্বার এবং পরিচালকেরা মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত হয়ে কার্যক্রম তদারকি শুরু করেন। এতে করে কাজে গতি আসে। বন্দরের জট কেটে কার্যক্রমেও গতি আসে।
জানা যায়, ৮ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৪৬টি কন্টেনার জাহাজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও পোর্ট কেলাং থেকে আসা ১৭৫টি জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষা না করে জেটিতে বার্থিং নিতে পেরেছে। সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, আগস্ট মাসে ৬৫টি, সেপ্টেম্বর মাসে ৫৮টি ও অক্টোবর মাসে ৫২টি জাহাজ সরাসরি বার্থিং পেয়েছে। একদিন অপেক্ষা করে ১৬৪টি জাহাজ বার্থিং পেয়েছে। এর মধ্যে আগস্টে ৪৮টি, সেপ্টেম্বরে ৫৯টি ও অক্টোবরে ৫৭টি জাহাজ একদিন অপেক্ষার পর বার্থিং পেয়েছে। উক্ত তিন মাসে দুদিন অপেক্ষা করে বার্থিং নিতে হয়েছে ৭৫টি জাহাজকে। আগস্টে ৭টি, সেপ্টেম্বরে ৪১টি এবং অক্টোবরে ২৭টি জাহাজকে বহির্নোঙরে দুদিন অপেক্ষা করতে হয়। তিন মাসে বহির্নোঙরে তিন দিন অপেক্ষা করেছে মাত্র ২৮টি জাহাজ। এর মধ্যে আগস্টে মাত্র ১টি জাহাজ, সেপ্টেম্বরে ১৯টি এবং অক্টোবরে ৮টি জাহাজকে বার্থিংয়ের জন্য তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। উক্ত তিন মাসে ৪৪৬টি জাহাজের মধ্যে মাত্র ৪টি জাহাজকে সর্বোচ্চ ৪ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এর মধ্যে আগস্টে কোনো জাহাজকে চার দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। সেপ্টেম্বরে ২টি এবং অক্টোবরে ২টি জাহাজকে ৪ দিন অপেক্ষা করে বার্থিং নিতে হয়।

বন্দর সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার-ভাটা নির্ভর বন্দর। জোয়ার ছাড়া এখানে জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হয় না। অনেকগুলো জাহাজ জোয়ার শেষ হওয়ার পর বহির্নোঙরে পৌঁছায় পরের জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই ধরনের বেশ কয়েকটি জাহাজকে শুধুমাত্র পরের জোয়ারের জন্য একদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ধারা ধরে রাখার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চলছে।
কর্তৃপক্ষ শিপ হ্যান্ডলিংয়ের এই গতি ধরে রাখতে চায় জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের জাহাজ ও কন্টেনার হ্যান্ডলিংসহ সার্বিক কার্যক্রমে গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এই গতি ধরে রাখতে কাজ করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকার্বন নিঃসরণ কতটা কমাবেন বলুন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬