নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যেরও দাম কমানো দরকার

| শনিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

সরকার সুপার পাম নামের ভোজ্য তেল এবং খোলা চিনির দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে পাম তেলের দাম এক মাস আগের তুলনায় কমছে ১২ টাকা। তবে চিনির দাম বর্তমান খুচরা দরের তুলনায় কেজিতে ১ টাকা কমবে। আগামী রোববার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পাম সুপার নামের খোলা তেল খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ দর হবে লিটার প্রতি ১৩৩ টাকা। এছাড়া পরিশোধিত খোলা চিনি খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ দর ৮৪ টাকা এবং পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ দর ৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে এই দুটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে গত ২৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুপার পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। তাছাড়া এখন থেকে এক বছরের বেশি সময় আগে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ খোলার চিনির সর্বোচ্চ মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। তবে গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বেচাকেনা হচ্ছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, সুপার পাম তেল লিটার প্রতি ১৪৫-১৫০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। আর খোলা চিনি কেনাবেচা হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা পর্যন্ত দরে।
অনেক দিন ধরেই আমাদের দেশ নানা রকম সংকটে আবর্তিত। এক সংকটের পর আরেক সংকটের আবির্ভাব। তার মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি এটা আর নতুন কিছু নয়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এদেশে বহুকাল ধরেই লাফিয়ে লাফিয়ে, দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটিসহ ওষুধপত্র ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্যের দাম। শুধু তাই নয় বরং নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ গুলোর প্রিয় খাবার ডিম। সেই ডিমের দাম আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষরা একটু ডাল-ভাত কিনে খাবে সে উপায়ও নেই। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে প্রান্তিক ও শ্রমজীবী মানুষজনের জীবন যাপন করতে কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সামগ্রিকভাবে জীবযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে গেছে। পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তারা অনাহারে অর্ধাহারে জীবনপাত করছেন। এদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়া মানেই দরিদ্র ব্যক্তিদের পক্ষে বজ্রাঘাততুল্য। ফলে বলা যায় যে, গরিব আছে সংকটে আর মধ্যবিত্তরা দিশেহারা। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলান করার কোনো পথ তাঁরা খুঁজে পাচ্ছে না। কারণ জনগণের আয়ের সাথে ব্যয়ের কোন মিল নেই। মানুষ জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পাবে যখন দেখবে তার আয়ের সাথে ব্যয়ের মিল পাচ্ছে। অন্যথায় সেটি কখনো সম্ভব হবে না।
নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ক্ষমতার বাইরে- বাংলাদেশে কোন পণ্যের দাম একবার বেড়ে গেলে তা আর কমার নজির নেই। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে পেট্রোল, এলপি গ্যাস ও ভোজ্য তেলের দাম কতবার বেড়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে কমার খবর প্রকাশ হলেও দেশের বাজারে তা কমার কোনো খবর নেই। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ জনগণ প্রতিদিনের খাদ্য সামগ্রী কিনতেই প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেবে। কারণ, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহনের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে মূলস্ফীতি ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়বে বলে আমরা মনে করি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। তাদের ওপর আঘাতটা আসছে সবচেয়ে বেশি। তাই সুপার পাম নামের ভোজ্য তেল এবং খোলা চিনির দামের মতো অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধরমজান আলী মামুন : নিবেদিতপ্রাণ শিশুসাহিত্যিক