নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনায় রূপান্তরিত হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, অন্যদিকে সমাজে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। গত ২৮ জুন দৈনিক আজাদীতে ‘নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে আরো চাপে মধ্যবিত্ত’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে আরো বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্তশ্রেণী। আয়ের সাথে ব্যয়ের ব্যবধানে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠেছে অধিকাংশের। অন্যদিকে নিম্নবিত্তের খাবারের প্লেট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে সবজি। কারণ বাজারে এখন ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নাই। আলু ভর্তা ডিম খাবে, সেখানেও বেড়েছে খরচ। আলুর কেজি এখন ৬৫ এবং ডিমের ডজন ১৬০ টাকা। এছাড়া মশুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে, আবার চুপ হয়ে যায়। এতে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেই চলেছে।
অথচ সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট চাপ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপণ্য মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগসূত্র দেখছেন বলে উল্লেখ করেছিলেন একসময়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো যে হঠাৎ করে করা তা তো না, এটা পরিকল্পিতভাবে।
তিনি বলেছিলেন, আমি একটা এলাকার কথা বলি, যেমন পাবনায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, মাচা করে করে বাতাস দিয়ে রাখা হয়। আপনি জানেন, কৃষকরা কত চালাক, তারা কিন্তু ওই বাজারের দাম দেখে তারপরে ছাড়ে। মোবাইল ফোন সবার হাতে আছে, দামটা তারা ঠিকই খবর পেয়ে যায়, কোথায় কি দাম। দাম যদি না পায়, বাজারে ছাড়ে না। এটা অনেকটা শাখের করাতের মতো। আপনি উৎপাদন করবেন, কৃষক উৎপাদন করবে, উৎপাদিত পণ্যটা সে বাজারজাত করবে, আপনি যদি এখন বেশি দাম কমাতে যান, কৃষক তার মূল্য পাবে না। আবার দাম বাড়লে যারা নির্দিষ্ট আয়ে চলতে হয়, তাদের জন্য কষ্ট। প্রত্যেক বিভাগে আলাদা আলাদা পণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে– সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সেসব বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা নিতে এবং বাস্তবায়ন ও মনিটরিং করারও নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা মানা হলে বাজার পরিস্থিতির একটা ফলপ্রসূ চিত্র পাবো আশা করি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ম খাটছে না। দেখা যায়, পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হয়। দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে বাজার সিন্ডিকেট বা চক্র। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায় বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা ছাড়া ভোক্তাদের কোনো উপায় থাকে না।
এভাবে দ্রব্যমূল্য, বিশেষত নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা অপরাধ বটে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত; কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। ফলে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব সরকারের। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছেন এবং প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেভাবে অগ্রসর হলে বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা কায়েমি স্বার্থে ইচ্ছেমতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালালে সরকার যেন হাত গুটিয়ে বসে না থাকে, সেই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। আমরাও চাই, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করুক।