টানা ১৫ মাস ছিলেন দলের বাইরে। সবশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেটি ছিল তার ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট। বলছি চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসানের কথা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিজের মাঠ চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যার অভিষেক হয়েছিল। সেদিন অভিষেকেই চমক দেখান নাঈম হাসান। প্রথম ইনিংসেই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। নিজের অভিষেকটাকে বর্নিল করে রেখেছিলেন চট্টগ্রামের এ তরুণ।
এরপর একে একে খেলে ফেলেছেন সাতটি টেস্ট। আর সে সাত টেস্টে উইকেট নিয়েছিলেন ২৫টি। চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন ১৫ মাস পর দলে ফেরা নাঈম। আর ফিরেই দেখালেন চমক। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করলেন চট্টগ্রামের তিনি। সবচাইতে বড় কথা এই ম্যাচে শ্রীলংকান অল রাউন্ডার অঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দিলেন না নাঈম। ১৯৯ রানে এই লংকান ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত এক ইনিংসে ৬ উইকেট তুলে নিলেন তিনি।
ক্যারিয়ারের আট টেস্টের সাতটি খেলেছেন নাঈম দেশের মাটিতে। যার মধ্যে চারটি আবার নিজের মাঠ চট্টগ্রামে। একটি টেস্ট খেলেছেন অবশ্য ভারতে। ২০১৯ সারের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সে টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে পারলেও বল করতে পারেননি অসুস্থতার কারণে। তার পরিবর্তে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন তাইজুল ইসলাম। তবে দেশের মাটিতে খেলা প্রতিটা টেস্টেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন নাঈম। চট্টগ্রামে খেলা চার টেস্টে (চলমান টেস্টসহ) উইকেট নিয়েছেন ১৮টি। যেখানে এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন ৬টি উইকেট। ক্যারিয়ারে ইনিংসে তিনবার নিয়েছেন ৫ উইকেট। যার দুটি এই চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
বিদেশের টেস্টের জন্য বিবেচনায় না রাখা নাঈম হাসান যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখনই জ্বলে উঠেছেন। প্রাপ্ত সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছেন। এবারে যেমন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে জানিয়ে দিলেন তাকে সুযোগ দেওয়া হলে সে সুযোগের প্রতিদান দিতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের এ তরুণ।
গত রোববার থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে যখন বাংলাদেশের বোলাররা উইকেট নিতে পারছিলেন না তখনই প্রথম আঘাত হানেন নাঈম। ফিরিয়েছিলেন লংকান দলপতি করুনারত্নেকে। দ্বিতীয় আঘাতটাও হেনেছিলেন নাঈম। এবার তার শিকার ছিল লংকান ওপেনার ফার্নান্ডো।
দ্বিতীয় দিনেও যখন উইকেটের জন্য হাহাকার করছিল বাংলাদেশ ঠিক তখনই ত্রাতা হয়ে আসেন নাঈম। গতকাল মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বাংলাদেশের ঘাড়ে যমদুতের মত হয়ে বসে থাকা দিনেশ চন্ডিমালকে ফিরিয়ে ভাঙ্গেন ১৩৬ রানের জুটি। নিরুশান ডিকবেলাকেও ফেরান নাঈম। চা বিরতির পর যখন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে ছুটছিলেন ম্যাথিউস আর শ্রীলংকা ছুটছিল চারশ রানের দিকে ঠিক তখনই আবার আঘাত হানেন নাঈম। এবার তার শিকার আভিষ্কা ফার্নান্ডো। এই উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মত পাঁচ উইকেট তুলে নিলেন। কিন্তু কে জানতো এরপর আরো বড় কিছু অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের এই তরুণের জন্য। ম্যাথিউস তখন একরান দূরে দাঁড়িয়ে তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির জন্য। আর শ্রীলংকা অপেক্ষা করছিল ৩ রানের জন্য। কারণ তিন রান হলেই তাদের স্কোর গিয়ে দাঁড়াবে চারশ রানে। ঠিক তখনই আবার ছোবল মারলেন নাঈম। কে জানতো এই ছোবলটা যে তার ক্যারিয়ারের সেরা এক অর্জনে পরিণত হবে। ১৯৯ রানের মাথায় ফেরালেন ম্যাথিউসকে। এই লংকান আফসোসের আগুনে পুড়লেও নাঈম যেন ভাসছেন আনন্দের সাগরে। ম্যাথিউসকে ফিরিয়ে তুলে নিলেন ক্যারিয়ার সেরা এক ইনিংসে ৬ উইকেট। ১০৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। যেন ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। আর শ্রীলংকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টটা যেন অনন্য এক টেস্ট হয়ে থাকল চট্টগ্রামের এই তরুণের জন্য। গতকাল পর্যন্ত ৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে ১৩ ইনিংসে বল করেছেন ২৫০.২ ওভার। ৩৯টি মেডেন সহ ৭৬১ রান খরচায় নিয়েছেন ৩১ উইকেট। যেখানে ৬ উইকেট একবার, ৫ উইকেট দুবার, ৪ উইকেট একবার আর তিন উইকেট একবার। ঘরের মাঠে দুর্দান্ত পারফর্ম করা নাঈম এবার দাবি করতেই পারে বিদেশের মাটিতে খেলার সুযোগের।