স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এ অবস্থায় মানুষকে বিভ্রান্ত না করে, আমাদের মনোবল না ভেঙে, আমাদের পাশে দাঁড়ান। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, আমাদের ভুল হতেই পারে। সেটা আমাদের ধরিয়ে দিলে আমরা শুধরে নিতে পারবো। কিন্তু সমালোচনা না করে আমাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তিনি বলেন, করোনা মহামারি শুরু থেকেই আমরা সাংবাদিকদের সহযোদ্ধা হিসেবে দেখেছি। তারাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে এই সময়েও কিছু কিছু মিডিয়া সমালোচনার মাধ্যমে আমাদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। না জেনে, না বুঝে, বিস্তারিত খোঁজ না নিয়ে সমালোচনার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
আসলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা, লকডাউন ও সরকারের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা চলছে নানা কর্নার থেকে। পত্রিকান্তরে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে পরিপক্বতার ছাপ নেই। সরকারকে আরও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হুটহাট যেন সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলাতে গেলে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর আগে বাস চলবে না বলা হলেও তা বহাল রাখতে পারেনি সরকার। মার্কেট খোলা রাখার জায়গায়ও সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়। কাজেই আরও ভেবেচিন্তে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গণমানুষের কথা চিন্তা করতে হবে।’
যদিও করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ করার জন্য যে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে সেখানেই কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার ইঙ্গিত রয়েছে, জেলা ও মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশ এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন। মূলত জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় প্রস্তুতি ও বাস্তবায়ন চলছে। তাছাড়া পুলিশও এই নির্দেশনা কঠোরভাবে মানানোর জন্য মাঠে থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও পুরো বিষয়টা তদারকি করছে।
বিধিনিষেধের আগের দিন বাজারগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। একদিকে বিধিনিষেধ অন্য দিকে রোজাএ দুই কারণে বাড়তি কেনাকাটা করতে বিভিন্ন বাজারে ও দোকানে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রোজার আগে কিছু পণ্যের বিক্রি বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে বিধিনিষেধ যোগ হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় বেশি। অনেকে আতঙ্কে বাড়তি পণ্য কিনেছেন। সেখানে যেভাবে ভিড় ছিল, তাতে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই গেছে।
এসব বিষয়ে কিছুটা সমালোচনা হতেই পারে। এই সমালোচনা থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে জনসচেতনতা বিষয়ে গুরুত্বারোপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নিজে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। রোগতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মীরজাদী সেব্রীনা ফ্লোরা বলছেন, আমাদের প্রকৃতির উপাদানের সঙ্গে বিবর্তিত হতে হবে। লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। আমাদের নিজেদেরও পরিবর্তিত হতে হবে। কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই টিকে থাকা সম্ভব। বাজে অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। কথায় কথায় মুখে আঙুল দেওয়া, কলমের মুখ কামড়ানো, আঙুল জিহ্বায় লাগিয়ে কাগজ ওল্টানো, থুতু দিয়ে টাকা গোনা-যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সেই মঙ্গে মাস্ক পরতে হবে এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ২০০৩ সালে জাপানে সার্স ভাইরাসের মহামারির পর তাদের মধ্যে এই অভ্যাসগুলো গড়ে উঠেছিল, যা আজ খুব ভালো কাজ করছে ইমিউনিটি বাড়াতে। ধূমপান যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। আমরা খুব ভাগ্যবান যে আমরা এমন একটি পরিবেশে আছি। নয়তো এই ঘনবসতির দেশ কবেই শেষ হয়ে যেত। এখানে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা খুব ভালো কাজ করছে। আর্দ্রতা বেশি থাকা মানে বাতাসে ধুলাবালি কম ওড়া। শীতে আর্দ্রতা কম থাকে, চারদিক শুষ্ক থাকে বলে বেশি ধুলা ওড়ে। এজন্য শীতপ্রধান দেশে করোনাভাইরাস হানা দিচ্ছে বেশি। এসি রুমের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। তাই এসি এড়িয়ে চলতে হবে। আমাদের সবাইকে এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।