নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস

হামিদা খাতুন পান্না | বুধবার , ৭ মে, ২০২৫ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

আমি শিখেছি নিজের জন্য কীভাবে বাঁচতে হয়, আমি জীবনে অনেক কিছুর ভিড়ে হেঁটেছি। অনেক মুখ চিনেছি। অনেক কথা কানে এসেছে কিছু সরাসরি, কিছু ফিসফাসে। কিছু অন্যের মুখে সমালোচনায়। প্রথম প্রথম খুব লাগতো। ভেতরটা যেন কেউ কুচিকুচি করে ছিঁড়ে দিত। মনটা বারবার ভেঙে যেতো।

চোখের সামনে হাসি, পিছনে বিষ এই দ্বিমুখী মানুষের আচরণ আমায় অবাক করতো। আমি ভাবতাম, কেন? আমি তো কারো ক্ষতি করিনি। আমি তো সবাইকে আপন ভেবেছিলাম। তারপর একদিন বুঝলাম সবাই আপন হয় না। সবাই আপনার ভালো চায় না। অনেকেই অপেক্ষা করে কখন আপনি হোঁচট খাবেন, কখন আপনি ভেঙে পড়বেন, যাতে তারা আড়ালে দাঁড়িয়ে নীরব আনন্দে ভাসতে পারে।

আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আর নয়। নিজের শান্তি, নিজের সম্মান এবার নিজের হাতে রাখবো। কারও কথায় কান দেব না, কারও ছোট করে দেওয়া ভ্রুকুটি আমায় স্পর্শ করবে না। যখন কেউ বলেছে, ‘তুমি পারবে না,’ আমি তার পাল্টা জবাব দেইনি। শুধু মন খুলে হাসছি। কারণ আমি জানি, তারা আমার গল্পের লেখক নয়। আমার গল্প আমি নিজেই লিখবো। আমার ব্যর্থতার মালিক আমি, আমার সাফল্যের মালিকও আমি। আমি শিখেছি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই। সব অপমানের প্রতিবাদ করতে নেই। চুপচাপ নিজের কাজ করে যেতে হয়। চুপ থাকা কোনো দুর্বলতা নয়; বরং ওটাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি এখন অন্যরকম জীবন বেছে নিয়েছি। যখন অন্যেরা পেছনে কথা বলে, আমি সামনের রাস্তা খুঁজি। যখন ওরা আমাকে ছোট করে, আমি আরও উঁচুতে উঠি। আর যখন বিষ ছড়ায়, আমি গন্ধ শুকি গোলাপের। সবাই যখন আমাকে কষ্টে কষ্টে ভারাক্রান্ত করতো, আমি তখন হেসে হেসে সব সয়ে যেতাম। এখন আমি জানি কারও জন্য থেমে থাকবো না। কারও ব্যর্থ আনন্দের উৎস হব না। আমি এখন সময় বের করি নিজের জন্য। এক কাপ চায়ে মুগ্ধ হই, নিজের প্রিয় বই পড়ি, ছাদে উঠে আকাশ দেখি, পুরনো ছবিতে হারিয়ে যাই। আমি বাঁচি। নিজের জন্য বাঁচি। আমি শিখেছি কিছু সম্পর্ক ছেড়ে দিলে জীবন হালকা হয়।

কিছু তিক্ততা মন থেকে মুছে দিলে নিঃশ্বাস গভীর হয়। সবাইকে সাথে নিয়ে চলা যায় না এটা মেনে নিতে হয়। কারণ জীবনের পথে একাই হাঁটতে হয় নিজের ছায়া সাথে নিয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখননের অভাবে নজু মিয়ার খাল হয়ে যাচ্ছে মৃত খাল
পরবর্তী নিবন্ধমক্কার জারওয়াল পাহাড়ের চূড়ায়