লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ–তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন প্রতি বছর। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর তাঁদের প্রথম পছন্দ থাকে একটি পছন্দের চাকরি প্রাপ্তি। চাকরির নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও বেশি সুযোগ–সুবিধা পাওয়াকে মোটাদাগে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অনেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে না পেরে বিভিন্ন বেসরকারি চাকরি করেন। নিতান্তই নিজের পছন্দে প্রথমেই বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের সংখ্যা নগণ্য। আবার সরকারি–বেসরকারি চাকরির একটি নির্দিষ্টসংখ্যক পদ থাকে, ফলে এখানে সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারায় বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার রয়েছেন। বেকারদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। সমপ্রতি একশনএইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তাঁরা চাকরি পাবেন না, গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ। চাকরি, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণে নেই ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশেই নির্ভর করে সে দেশের মোট শ্রমশক্তির কর্মসংস্থানের ওপর। বাংলাদেশে চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান না হওয়ায় প্রতিবছর কর্মক্ষম মানুষ নতুন করে বেকার হচ্ছে। কারণ প্রবৃদ্ধির সমান্তরালে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে দেশের কর্মক্ষম শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ কাজের বাইরে থেকে যাচ্ছে। আর সে কারণেই দেশের সার্বিক উন্নয়নে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। অস্বীকার করার উপায় নেই সরকার দেশের উন্নয়ন চায়। এটিও স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থনীতিবিদদেরও একই অভিমত। এখন এই উন্নয়নকে টেকসই ও স্থায়ী রূপ দিতে হবে। আর এর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন কর্মপরিবেশের উপযোগী একটি শ্রমশক্তিও তৈরি করতে হবে। কর্মসংস্থান কী করে সৃষ্টি করা যাবে? কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সেটি কিভাবে সম্ভব? আজকের দিনে চাকরির বাজার তো সহজ নয়। দেশে প্রতিবছর নতুন জনশক্তি যুক্ত হচ্ছে। তাদের তো উৎপাদনশীলতায় নিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের এক সভায় উদ্যোক্তা হতে তরুণদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, চাকরির পেছনে ছোটার যে আমাদের মানসিকতা, সেটার পরিবর্তন করতে হবে। তিনি যুবসমাজকে চাকরি করার চেয়ে চাকরি দেওয়ায় মনোযোগী হওয়ারও আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান আমাদের তরুণদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। দেশে প্রতিবছর যেসব তরুণ–যুবা কর্মবাজারে প্রবেশ করেন, তাদের অনুপ্রাণিত করছেন। বিদেশে পাঠিয়ে, সরকারি–বেসরকারি চাকরি দিয়ে এবং নানা অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার পরও প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ ছেলে–মেয়ে নিজেদের জন্য একটি শোভনীয় কাজের ব্যবস্থা করতে পারেন না। এই তরুণদের ১০ শতাংশকেও যদি উদ্যোক্তাতে পরিণত করা যায়, তাহলে তাঁরাই বাকিদের কর্মসংস্থান করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আজকের তরুণদের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। আজকের তারুণ্য পাস করেই চাকরির পেছনে ছোটে। এই মানসিক গঠন থেকে তাদের বের করে আনার কথা বারবারই বলা হচ্ছে। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোক্তা হতে হবে। অন্যকে চাকরি দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। উদ্যোক্তা সৃষ্টির কাজটি সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন সযত্ন দৃষ্টি। চাকরির পেছনে না ছুটে স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা হিসেবে অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে দেশের তরুণদের প্রতি বারবারই আহবান জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনেক সময় প্রশ্ন তুলেছেন, সবাই চাকরির পেছনে ছুটবে কেন? বরং এ দেশের ছেলেমেয়েকে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা–বাণিজ্য করে আত্মকর্মসংস্থান এবং অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। তাই নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।