নিজেদের শ্রমে নিজেদের সেতু

আত্মতৃপ্তি বরুমতি খালের দুই পাড়ের মানুষের

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | বুধবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশ উপজেলার মধ্যম হাশিমপুর নোয়া মোজাহের পাড়া এলাকার মধ্যদিয়ে বয়ে চলেছে বরুমতি খাল। দুপাড়ের মানুষের মধ্যে যাতায়াতে কোনো সেতু না থাকায় গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল। অনেক চেষ্টা-তদবিরেও সরকারিভাবে একটি সেতুর ব্যবস্থা করতে না পারায় নিজ অর্থ ও নিজ শ্রমে গ্রামবাসী একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা নিজেদের মধ্য থেকে অর্থ সংগ্রহ করে প্রায় ১ বছর আগে স্বেচ্ছাশ্রমে শুরু করেন সেতু নির্মাণের কাজ। পাঁচ লাখের অধিক ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুতে চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল জব্বার চৌধুরীও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। সম্প্রতি সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। নিজেদের শ্রম ও অর্থে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের অতীব প্রয়োজনীয় সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় আত্মতৃপ্তি থাকলেও ভবিষ্যতে এই স্থানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মিত হবে এমন প্রত্যাশা গ্রামবাসীর।

স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসী সাংসারিক অন্যান্য কাজের মাঝেও প্রায় এক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। এর নির্মাণে কেউ অর্থ দিয়েছেন, কেউ শ্রম দিয়েছেন, কেউ বা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। এলাকার ৮/১০ জন করে লোক সেতুটি নির্মাণে প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন। এরমধ্যে কেউ মাটি কাটা, কেউ পিলার নির্মাণ করা, কেউ কাঠের সাইজ করা, কেউ কেউ সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ করেছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আরসিসি ঢালাই ও ইটের সমন্বয়ে নির্মিত তিনটি পিলারের উপর নির্মাণ করা হয় সেতুটি। দীর্ঘ প্রায় ১ বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকার মানুষ সেতুটি নির্মাণ করার পর সম্প্রতি এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এতে নোয়া মোজাহেরপাড়ার ২ শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিক মানুষ উপকৃত হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আর্থিকভাবে সহযোগিতা করায় সেতুটি নির্মাণ সম্ভব হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত সেতুটি উদ্বোধন করার পর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় নোয়াপাড়া গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। এতে খাল পারাপারে দুই পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ আর নেই। চমৎকার কাঠের এই সেতু দিয়ে বর্তমানে চলাচল করছে মোটর সাইকেল, রিকশা ও ইজিবাইক। অথচ উক্ত গ্রামের বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনের পাশ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করে আসছিল।

উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী জানান, এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সেতুটি নির্মাণ করায় বরুমতি খালের দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার প্রায় সহস্রাধিক মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে। এলাকাবাসীর এ উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ওই স্থানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি সেতুর পার্শ্ববর্তী ৬৫০ ফুটের মতো সংযোগ সড়কে ব্রিক সলিংও করে দেয়া হবে।

হাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট খোরশেদ বিন ইসহাক জানান, বরুমতি খালের ওই অংশে একটি স্থায়ী সেতু না থাকায় গ্রামবাসী চলাচলে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিল। বিশেষ করে অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য। অবশেষে নোয়াপাড়া গ্রামবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রমে কাঠের সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় গ্রামবাসী এখন স্বাচ্ছন্দে খাল পারাপার হতে পারছেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন ওই গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ সকল স্তরের মানুষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাজিম উদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ মাহফিল
পরবর্তী নিবন্ধচাকরি ফিরে পেলেন চসিকের সেই পরিচ্ছন্ন কর্মী