নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের বিকল্প নেই

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএ

| শনিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

একটা আনন্দ সংবাদ পেয়েছেন নগরবাসী। সেটা হলোএবার দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে চান দুই সংস্থা প্রধান। বর্ষাকে সামনে রেখে গত বুধবার নগরের মোগলটুলী এলাকায় খাল পরিষ্কার কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এবং সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। এ সময় মেয়র বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশন এখন একটি টিম হিসেবে কাজ করছে।

গত ৩০ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোগলটুলী খাল খনন কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। আমরা যদি সচেতন না হই, এই মানবসৃষ্ট দুর্যোগ আমাদের বহন করে যেতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আমরা যতই কাজ করি না কেন গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে এ প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে সফল হবে না।

সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, শুধুমাত্র চট্টগ্রাম না, সারা বাংলাদেশের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প হচ্ছে একটি টপ প্রায়োরিটি প্রকল্প। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও আর চার উপদেষ্টা জলাবদ্ধতা প্রকল্প সরাসরি মনিটরিং করছেন। সিডিএ, সিটি কর্পোরেশনসহ অনেকগুলো সংস্থা এখন সমন্বিতভাবে কাজ করছে। চট্টগ্রামবাসীর জন্য সুসংবাদ হচ্ছে সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশন এখন একটি টিম হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, মূল এবং শাখা ড্রেন পরিষ্কার রাখতে হবে।

লে. কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ৩৬টি খাল যদি দখলমুক্ত করে আমরা নির্মাণ করি তাহলে জলাবদ্ধতা চলে যাবে বিষয়টি এমন না। খালগুলোতে পানি ধারনের জন্য বহনযোগ্য নেটওয়ার্কের প্রয়োজন রয়েছে। খালের প্রতি মানুষের সামাজিক যে দায়বদ্ধতা সেখানে কিছুটা হয়তো কমতি রয়েছে। আজ আপনাদের সবাইকে নিয়ে আমাদের খাল খনন কার্যক্রম শুরু করলাম।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, আমরা সরকারের প্রশাসন হিসেবে যেটা সিদ্ধান্ত পেয়েছি সেটা হচ্ছে যে আমরা সকলে মিলে সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ আরো যে কয়টা সংস্থা রয়েছে আমরা এখন নিয়মিত বসছি এবং আমরা আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে সিটি কর্পোরেশনকে সহায়তা করছি। যেন সিটি কর্পোরেশন আপনাদেরকে একটা সুন্দর শহর উপহার দিতে পারে।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এর আগে একটি অনুষ্ঠানেও বলেছেন, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত কার্যক্রমের উপরই একটি শহরের প্রকৃত উন্নয়ন নির্ভর করে। এই সমন্বয় নিশ্চিত করতে নগর সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সেবা সংস্থাগুলোকে এক বছরের কর্মপরিকল্পনা আগেভাগে তৈরি করে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখতে হবে।

আসলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে এবং তার জন্য মেয়রকে অভিভাবকত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাও দিতে হবে। শহরটা যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের অধীনে, সেহেতু সিটি মেয়রকে এর দায়িত্ব দেওয়া শ্রেয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেন প্রশাসনিক দূরত্ব না থাকে। আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও সুফল না মেলার ক্ষেত্রে বরাবরই এক সংস্থা আরেকটির দিকে আঙুল তুলে থাকে। মনে রাখা দরকার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেরও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। নগর উন্নয়নে যথেষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সুযোগ আছে। কিন্তু সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। নগর উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পনা নিয়ে থাকে; পরিকল্পনার আওতায় সব সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। এবার যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএ একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে, সেহেতু বুকে আশার বাণী সঞ্চারিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধনেরও বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে