একটানা বৃষ্টিতে ডুবে যায় শহর। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তাতে নাকাল হচ্ছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী। চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে, কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে আসছেন নগরবাসী। তবে আশ্বাস শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ, বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবছে পুরো নগরী। যেন জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখগাথা হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী কিংবা অল্প বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে, এই নিয়তি একপ্রকার মেনে নিয়েছে নগরবাসী। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি যেন নেই। দুঃখের বিষয়, হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এত টাকা ব্যয় করার পরেও কেন জলাবদ্ধতা হবে–তা অনেকের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃদপ্তরের সমন্বয় সভায় চমৎকার একটি সিদ্ধান্ত হলো। বলা হলো, আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার সমন্বয়ে একটি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করা হবে। টিমের সদস্যদের ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা থাকবে। কোথাও কোনো অসঙ্গতি হলে সাথে সাথে সমাধানে কাজ করবে তারা।
দৈনিক আজাদীতে ১৪ মে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন, সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। দুজনই নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেন। সভায় জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ শেষে বুঝিয়ে দিলে তা রক্ষণাবেক্ষণে চসিকের আর্থিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্লুইচ গেইট অপারেশনেও চসিকের কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আরো দুই মাস সময় আছে। এই মৌসুমে কীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে জনগণকে স্বস্তি দিতে পারি সে পরিকল্পনা করতে হবে। এক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করবে। কোথাও কোনো অসঙ্গতি হলে সাথে সাথে কেউ কারো দিকে যেন তাকিয়ে থাকতে না হয়। এই টিমের সুপ্রিম পাওয়ার থাকবে। এই টিম সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাধান করবে।
অন্যদিকে, সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, সমস্যা অনেক। কিন্তু সমাধানও করতে হবে। আগে সিটি কর্পোরেশন না সিডিএ কে কাজ করছে তা নিয়ে একটা ধাক্কাধাক্কি ছিল। একজন আরেকজনের ফান্ড নিয়ে গেছে মনে করত। আমাদের মধ্যে সেটা নেই। আমরা সবাই মিলে একসাথে চট্টগ্রামের উন্নয়নে কত প্রকল্প আনতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ করব। আমরা উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে ফান্ড আনার চেষ্টা করব। তাহলে ফান্ডও বেশি আসবে। আমরা দুই মুক্তিযোদ্ধা, হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কাজ করে যাব। এটা আমাদের শপথ। সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ আমরা মিলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূর করব।
এবার আমরা একটু আশাবাদী হতে চাই। চট্টগ্রাম নগরীতে যে ২২টি সেবাদানকারী সংস্থা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সংস্থাগুলো ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত হওয়ায় তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে পরিচালিত হয়। ফলে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে স্বপ্ন দেখেছিলেন–এক ছাতার নিচে নগর শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে; তা সম্ভব হয়নি। আজও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রশাসনিক দূরত্ব রয়েই গেছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও সুফল না মেলার ক্ষেত্রে বরাবরই এক সংস্থা আরেকটির দিকে আঙুল তুলে থাকে। এবার যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএ একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে, সেহেতু বুকে আশার বাণী সঞ্চারিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গুরুত্ব ও বরাদ্দ দিয়েছেন, তার সর্বোচ্চ ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধনেরও বিকল্প নেই।