একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, মানুষ একমাত্র প্রাণী যাকে জন্মের পর মানুষ হতে হয়। অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এমন নাই, মানুষের ক্ষেত্রে রয়েছে। মানুষ জন্ম নেয় শিশু হিসেবে। এরপর তাকে মানুষ হতে হয় কাজের মাধ্যমে। এজন্য একটি কথা রয়েছে, যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে, কেঁদেছিলে তুমি হেসেছিলে সবে। এমন জীবন করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।
সাংস্কৃতিক সংগঠন সন্দীপনার কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচির চতুর্থ দিনে একুশে স্মারক সম্মাননা প্রদান ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনাতয়নে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একটি কথা রয়েছে, আমরা পৃথিবী পরিবর্তন করতে চাই নিজেরা পরিবর্তন না হয়ে। এ রকম হলে সমাজে পরিবর্তন আসবে না। আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। নিজে পরিবর্তন হলেই সমাজ পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর সমাজসেবা করতে হবে। তবে সমাজসেবা হতে হবে অন্তর থেকে।
এম এ মালেক বলেন, অনেকে বলে শিক্ষার্থীরা আমাদের ভবিষ্যৎ। আমি সেটা মনে করি না। আমাদের বর্তমানকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বর্তমানকে পুঁজি করে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভবিষ্যতে কী হবে। তিনি এপিজে আব্দুল কালামের উক্তি উল্লেখ করে বলেন, স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন সেটা যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের কাজে লেগে থাকতে হবে। সবাই প্রতিযোগিতা করলেও পুরস্কার সবাই পায় না। অংশগ্রহণ করা–ই বড় ব্যাপার। অনেকে বলে, ইমপসিবল। আমি বলি নাথিং ইজ ইমপসিবল। এটাকে অন্যভাবে বললে, আই এম পসিবল, অর্থাৎ আমার দ্বারা সম্ভব। তোমরা যদি কষ্ট করে পড়াশোনা করো সেটা কখনো বৃথা যাবে না।
একুশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একুশ মানে মাথা নত না করা। মাথা নত না করা আমি শিখেছি আমার বাবার কাছ থেকে। একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ আমাদের কোহিনুর প্রেসে ছাপিয়েছি। এজন্য আমার বাবার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সন্দীপনা কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বস্ত্র নকশাশিল্পী রওশন আরা চৌধুরী। সন্দীপনার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ভাস্কর ডি কে দাশ মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংবাদিক বেলায়েত হোসেন, চবি সিনেট সদস্য ড. মনজুরুল হক চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম।
এবার ২১ স্মারক সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন গবেষক আবদুল হক চৌধুরী (গবেষণা, মরণোত্তর), ওস্তাদ জগদানন্দ বড়ুয়া (সঙ্গীত, মরণোত্তর) প্রফেসর মাহবুবুল হক (শিক্ষা, মরণোত্তর) প্রফেসর ড. জয়নাব বেগম (শিক্ষা), খালেদা আদিব আওয়াল (সমাজসেবা), কবিয়াল আবদুল লতিফ (লোকশিল্প), নুরুল আলম চৌধুরী কিরণ (সমাজসেবক), সুব্রত বড়ুয়া রনি (সংগীত ও শিল্পচর্চা), গোলাম মাওলা মুরাদ (সাংবাদিকতা ও সমাজসেবক)
সন্দীপনা কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রওশন আরা চৌধুরী বলেন, যারা পথ চলতে চায় তাদের মাথার উপর হাত রাখলে পথ চলা মসৃণ হয়। বাংলার লোকসংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। সন্দীপনা মানবিক হতে শিখায় শিশুদের। মানবিক হওয়ার জন্য টাকা লাগে না, মন থাকা দরকার। আমরা ভালো মানুষ তৈরি করার জন্য কাজ করছি।
স্বাগত বক্তব্যে সাংবাদিক বেলায়েত হোসেন বলেন, আজাদী এমন একটি পত্রিকা, যে পত্রিকা বাংলাদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছে। আজাদী সম্পাদকের পুরস্কার পাওয়া পুরো চট্টগ্রামবাসীকে গৌরবান্বিত করেছে।
ড. মনজুরুল হক চৌধুরী বলেন, ২৪–এ বৈষম্যের জন্য আন্দোলন হয়েছে। বায়ান্নতেও বৈষম্যের কারণে আন্দোলন হয়েছে। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে একটি সন্দীপনা। গৌরবের ৩৫ বছর পার করছে সংগঠনটি। বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার জন্যই সন্দীপনা কাজ করে যাচ্ছে।
নুরুল ইসলাম বলেন, আজাদী শব্দের মানে বোঝাতে পারছি না। এর কাছাকাছি বাংলা শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। তবে এ শব্দের মধ্যে একটা স্পিরিট রয়েছে।