নিজেকে ঢেলে সাজানোর ইচ্ছায় শুরু হোক নতুন বছর

আফতাব চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সাল ২০২৪ বিদায় নিয়ে ২০২৫ এসে হাজির। হিসাবনিকাশের খেরো খাতার শূন্য পাতা পুরো একটি বছরের অম্লমধুরতিক্ত নানা স্বাদের অভিজ্ঞতা আর নানা জাতের হিসাবনিকাশে ভরে ওঠার অপেক্ষায়। নতুন বছর, নতুন সূর্য, নতুন সকাল। সব নতুনের সমাবেশে কারইবা পুরোনো থাকতে ইচ্ছে করে! তাই বদভ্যাসের দাসত্ব ছিঁড়ে সুঅভ্যাসের সঙ্গে সন্ধি করে থাকতে ইচ্ছে করে ! নতুন বছরে নতুন আমি হয়ে উঠতে চাই। বছরের শুরুতে ফেসবুক ‘নিউ ইয়ার রেজল্যুশন’ এ সরগরম হয়। নতুন বছরে নতুন নতুন প্রতিজ্ঞার দীর্ঘ তালিকা। নতুন বছরের শুরুতে উৎসাহউদ্দীপনা ও উদ্যম টগবগিয়ে ফুটতে থাকে। একটা সজীব সূচনার জন্য অনেকেই তাই বছরের প্রথম দিনটাকে বেছে নেন। নীরোগ সুস্থ শরীর, মজবুত মানসিক গঠন, দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, সফল কর্মজীবন, সুখী দাম্পত্য জীবন কিংবা উষ্ণ প্রেমের সম্পর্কজীবনকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করতে এই তো আমাদের চাওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চাওয়াগুলোকে পাওয়ায় পরিণত করা মানুষের সামর্থ্যের বাইরে নয়, নয় অসাধ্য সাধন। দৃষ্টি ভঙ্গি আর জীবনাচারে কিছু পরিবর্তন আমাদের উপহার দিতে পারে সেই কাঙ্ক্ষিত জীবন। নিজেকে ঢেলে সাজানোর ইচ্ছায় শুরু হোক নতুন বছর ইচ্ছাপূরণ যখন আমাদের হাতেই।

জীবনকে উপভোগ করতে চাইলে চাই নীরোগ শরীর। নতুন বছরে জীবনীশক্তি বাড়াতে কিছু পরামর্শ হলোসকালসকাল ঘুম থেকে ওঠা, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া। ব্যায়াম ও ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তোলা। সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস, আর সারাদিন অন্তত আরও ছয় গ্লাস পানি পান। ভারী প্রাতঃরাশ, হালকা নৈশভোজ। প্রতিদিন খাবারের পাতে শাকসবজিফলমূল রাখা। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে বাড়বে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। বংশগত রোগগুলোকেও রাখা যাবে নিয়ন্ত্রণে। মেদহীন শরীর পেতে চাইলে কমিয়ে নিতে হবে বাড়তি ওজন। পুষ্টিবিদদের সাফ কথা, দিনে কতবার কোন ধরনের খাবার কতটুকু খাচ্ছেন, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সকালের খাবার দেরিতে খেলে রাতের খাবার দেরিতে খাওয়া হয়। তাতে ওজন বাড়ে। রাতে আমরা কম সক্রিয় থাকি বলে কম ক্যালোরিযুক্ত সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার কম রাখতে হবে। কোমল পানীয়ের পরিবর্তে লেবুর রস, ডাবের পানি খাওয়া যায়। কোনো বেলায় তেলচর্বিযুক্ত মশলাদার খাবার খাওয়া হয়ে গেলে পরের বেলা ডালসবজি খেয়ে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। খিদে পেলে চানাচুর, বিস্কুট বা সিঙ্গারার মত খাবার না খেয়ে শসা, টক দই, ফলমূল খেলে পেট ভরে, ওজন বাড়ে না।

আমরা অনেকেই জীবনের ছোটোখাটো টানাপোড়নেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। মনোবল বাড়ানোর উপায় কী? মনরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাকেও জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিলে ব্যর্থতার গ্লানি আমাদের গ্রাস করতে পারে না। প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু সময় বের করা উচিত। আত্মসচেতনার চিন্তা শক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে এবং সমস্যা সমাধানে এই একাকী সময় দারুণ কার্যকর। শিশুরা নতুন প্রাণের স্ফুরণ। ওদের সঙ্গে মিশলে মন সজীব হয়। এসবের বাইরে প্রথাগত চিন্তার ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প চিন্তার ক্ষেত্রে প্রবেশ করলে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়, মন উদার হয়। মোদ্দা কথা, দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি পরিবর্তনই মানসিকতাকে অনেকটাই দৃঢ় করতে পারে।

বিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের প্রভাব পড়ছে পরিবারগুলোতে। আলাদা হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। মুখোমুখি আলাপের চেয়ে মানুষ এখন ভার্চুয়াল জগতের যোগাযোগের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আত্মকেন্দ্রিক এই সময়ে মাবাবার সঙ্গে সন্তানদের দুরত্ব বেড়েছে যেকোন প্রজন্মের থেকে বেশি। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা দূর করতে দিনের কোনো একটা সময় একসঙ্গে কাটানো উচিত, যেমন রাতের খাবার এক সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। এক সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেলেও শীতলতার বরফ গলে, দূরত্ব ঘোচের ছোটবেলায় সন্তানকে সময় না দিলে বড় হয়ে তারা বাবামাকে এড়িয়ে চলতে পারে। তাই দিনের অন্তত কিছুটা সময় তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। শিশুদেরকে পারিবারিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। মাবাবারা সব সময় অভিভাবকসুলভ আচরণ না করে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করলে সন্তানেরা মনের কথা অসঙ্কোচে বলতে পারে। পারিবারিক বন্ধন কারও একক প্রচেষ্টায় টিকে থাকে না, চাই পরিবারের সব সদস্যের অংশগ্রহণ। তবে বাবামার ভূমিকাই এক্ষেত্রে মুখ্য।

পেশাজীবীদের মধ্যে যাঁরা বিদায়ী বছরে আশানুরূপ সাফল্য পাননি, তাঁরা নতুন বছরে কর্মক্ষেত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুত হবেন সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শকর্মক্ষেত্রে ভালো করার পূর্বশর্ত নিজের পেশাকে ভালোবাসা। কাজের প্রতি আন্তরিক না হয়ে দায় সারা ভাবে কাজ করলে সাফল্য ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকবে। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সব সময় নিজেকে শানিয়ে রাখতে হবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল পেশা জগতে নিজেকে সময়োপযোগী করে তুলতে হবে।

নিজেদের অজান্তেই অনেক সময় দাম্পত্য বা প্রেমের সম্পর্ক এক ঘেয়ে হয়ে যায়। কখনো ভুলবোঝাবুঝি আর এক রোখা মনোভাবে শ্বাসরোধ করে ফেলে সম্পর্কের। মনোবিদদের মতে, দম্পতি বা প্রেমিক যুগলের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া খুব জরুরি। কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা চেপে নারেখে দু’জনে আলোচনায় বসলে ভূল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে না। কোনো অভিযোগ থাকলে আক্রমণাত্মক সমালোচনা নাকরে নমনীয়ভাবে বুঝিয়ে বলাটা ভালো। এক ঘেয়েমি থেকে সম্পর্ককে বাঁচাতে রোজকার এক ধরনের কাজের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দু’জনে ঘুরতে যেতে পারেন, নতুন কিছু শিখতে শুরু করতে পারেন এক সঙ্গে। সম্পর্ক তাজা থাকবে।

একসঙ্গে অনেক লক্ষ নিয়ে এগুলে অনেক সময় মনোযোগের কেন্দ্র হারিয়ে যায়। তাই শুরুতে অগ্রধিকারের ভিত্তিতে বেছে নিতে পারেন যেকোনো একটি লক্ষ্য। সেখানে পৌঁছে গেলে মনোযোগ দিতে পারেন আরেকটি লক্ষ্যে। নিজের ভিতর যে পরিবর্তনটা আমরা আনতে চাই, সেটাকে হতে হবে সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট ও বাস্তব সম্মত। বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। কোনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পরিবর্তনের অগ্রগতি নিয়ে আলাপ করলে উৎসাহ বাড়ে। লক্ষ্য অর্জনের পথে ছোটখাট সাফল্য উদযাপনে অনুপ্রেরণা বেড়ে যায়। তাই বাগাড়ম্বর নয়, ২০২৫ সাল হোক লক্ষ্য পূরণের বছর।

লেখক

সাংবাদিককলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বপ্নের দেশ আমেরিকার ক্যালফোর্নিয়ার ল্যান্ডমার্ক ব্রিজটি আত্মহত্যারও ব্রিজ
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে নববর্ষ উদযাপনের ভিড়ের মধ্যে উঠে গেল গাড়ি, নিহত ১০