অবস্থা বেগতিক দেখে হার স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে-পরে নিজের কোনো আচরণের জন্য যাতে তাকে আদালতে যেতে না হয়, সেজন্য পথ পরিষ্কার রাখতে চাইছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। এ ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শও করছেন। হোয়াইট হাউস সূত্রে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এমন খবর এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের হাতে বিশেষ ক্ষমার অধিকার আছে। তাতে সাধারণ নাগরিক থেকে আমলা, পরিবার অথবা বন্ধুব-বান্ধব জাতীয় অপরাধ আইনের আওতায় যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন তিনি। হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার আগে সে ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই ট্রাম্প নিজের ভবিষ্যৎ মসৃণ করতে চাইছেন বলে অভিযোগ।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখানোর সময় থেকে অসংখ্যবার বিতর্কে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে নতুন সংযোজন গত বুধবারের ঘটনা। সেদিন জনগণের রায় অস্বীকার করে উন্মত্ত জনতাকে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে তাণ্ডব চালানোয় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর ফলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে তাঁকে কীভাবে অপসারণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে কংগ্রেসে। শোনা যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমা মঞ্জুরের অধিকার প্রয়োগ করে ছেলেমেয়ে এবং নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। খবর বিডিনিউজ ও বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার।
হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার আগে ক্ষমা মঞ্জুরের রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে পালন করে আসছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা। এক সময় রিচার্ড নিঙনকে সমস্ত অপরাধ থেকে মুক্ত করেছিলেন জেরাল্ড ফোর্ড। মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিজের ভাই রজার ক্লিনটনকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন বিল ক্লিনটনও।
এদিকে সে দেশের আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, যত বড় পদাধিকারীই হোন না কেন, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অপরাধ মামলায় কেউ নিজেই বিচারকের ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তবে স্বেচ্ছায় পদ থেকে সরে গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ট্রাম্প ক্ষমা চাইতে পারেন এবং পেন্সও তাঁকে ক্ষমা করে দিতে পারেন বলে মত আইনজীবীদের অন্য একটি অংশের।
পেন্সের সঙ্গেও দূরত্ব : ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের ভেতর নিজেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন। নির্ভর করছেন তার একান্ত অনুগত কয়েকজনের ওপর আর সেইসব সহযোগীর ওপর ফুঁসছেন, যারা তার কথার অবাধ্য হওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া সহযোগীদের মধ্যে এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের নামও আছে বলে এ সম্বন্ধে অবগত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
বুধবার ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার পর প্রেসিডেন্টের দীর্ঘদিনের অনেক উপদেষ্টা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। উল্টোপাল্টা কথা বলে ট্রাম্পই তার সমর্থকদের তাঁতিয়ে দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন তারা।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সমপ্রতি কোনো কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও পেন্সের মধ্যে দূরত্ব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দুজন হয়তো একে অপরের সঙ্গে আর কখনো কথা না-ও বলতে পারেন।