নিজেই আমদানিকারক,নিজেই রপ্তানিকারক

সোয়া ২২ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও কাস্টমস কর্তকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

জালিয়াতির মাধ্যমে ২২ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ৩৪২ টাকা আত্মসাৎ এবং ৭ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ১১২ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে নগরীর খুলশীর এক ব্যবসায়ী, তার স্ত্রী, শ্বশুর, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কাস্টমসের কর্মকর্তাসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল মঙ্গলবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম১ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম। এজাহারে তিনি নিজেই পণ্যের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক বলে উল্লেখ করা হয়।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, জালজালিয়াতি করে প্রথমে ডকুমেন্টস তৈরি এবং পরে তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বন্ড সুবিধায় নিয়ে আসা ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৯২ কেজি কাঁচামাল বাবদ ২২ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ৩৪২ টাকা আত্মসাৎ, আত্মসাৎ ঘটনায় সহযোগিতা এবং ৭ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ১১২ টাকা মানি লন্ডারিং এবং মানি লন্ডারিংয়ে সহযোগিতা করেছেন আসামিরা; যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫() এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪() ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

১৩ আসামি হলেন খুলশীর বে গ্রিন ভ্যালি এলাকার নর্ম আউটফিট অ্যান্ড এঙেসরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আবেদীন, তার স্ত্রী সোহেলা আবেদীন, শ্বশুর একেএম জাহিদ হোসেন, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এসইভিপি সৈয়দ মাহবুবুল হক, ব্যাংকটির নগরীর ওআর নিজাম রোড শাখার শাখা প্রধান প্রদ্যুত বিকাশ চৌধুরী, প্রিন্সিপল অফিসার ও ম্যানেজার অপারেশন মো. জাকের হোসেন জুয়েল, প্রধান কার্যালয়ের সিআরএমডি ডিভিশনের সিনিয়র এঙিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট তনুশ্রী মিত্র, সিনিয়র এঙিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আজিম উদ্দিন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুখতার হোসেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন চৌধুরী, মো. আলমগীর হোসেন ভূঞা, মো. নায়েবুল ইসলাম ও কাস্টমস হাউস ঢাকার রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আবু তাহের খান।

এঅ্যান্ডবি আউটওয়্যার, কোল্ড প্লে স্কুল প্রোডাক্ট এবং নর্ম আউটফিট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সুবিধাভোগী নাজমুল আবেদীনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় জালজালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ এবং বিদেশে পাচারের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদক। এ অনুসন্ধান করতে গিয়েই মূলত বন্ড সুবিধায় নিয়ে আসা ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৯২ কেজি কাঁচামাল বাবদ ২২ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ৩৪২ টাকা আত্মসাৎ ও আত্মসাতে সহযোগিতা এবং ৭ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ১১২ টাকার মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি উঠে আসে।

রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণ প্রস্তাবে বেপজা থেকে এনওসি নেওয়ার জন্য শর্ত দেওয়া থাকলেও প্রধান কার্যালয়ের সিআরএম শাখা তা বোর্ড মেমোতে উপেক্ষা করেছে; যা উক্ত প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছে। নর্ম আউটফিট অ্যান্ড এঙেসরিজের গৃহীত ঋণের গ্যারান্টার এবং মূল সুবিধাভোগী নাজমুল আবেদীন উক্ত প্রতিষ্ঠানটির মূল দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তার স্ত্রী সোহেলা আবেদীন এবং শ্বশুর একেএম জাহিদ হোসেনের নামে নর্ম আউটফিট অ্যান্ড এঙেসরিজ নামের প্রতিষ্ঠানটি খুলেছেন এবং এঅ্যান্ডবি আউটওয়্যার এবং কোল্ড প্লে স্কুল প্রডাক্ট প্রতিষ্ঠান দুটিকে সিকিউরিটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মূলত প্রতারণার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করার উদ্দেশ্যে তিনি এ কাজ করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, আইটিএঙ ট্রেডিং এসএ ও সিলড্রেন এপারেল নেটওয়ার্ক লিমিটেড নামের দুটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামে জাল সেলস কন্ট্রাক্ট প্রদর্শন করে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে আমদানিকৃত পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি এবং রপ্তানি দেখিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৯০ হাজার ২০৮ টাকার পণ্য রপ্তানি করেন; যার মধ্যে অগ্রিম টিটি বাবদ ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬ টাকা রেমিটেন্স এলেও বাকি ৭ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ১১২ টাকার রেমিটেন্স তিনি প্রত্যাবাসন করেননি। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বায়ার আলমুতাফাওয়েক রেডিমেইড গার্ম টিআরডিজি মূলত নাজমুল আবেদীনের সৃজিত একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি মূলত মানি লন্ডারিং করার উদ্দেশ্যে আরব আমিরাতে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং জালিয়াতি করে পণ্য রপ্তানি করেন।

অরিজিনাল বি/এল শাখা ব্যাংকে রক্ষিত থাকলেও জাল বি/এল সৃজন করে গ্রাহক শাখা ব্যাংকের স্বাক্ষর, সিল ও পিএ নম্বর জাল করে বিদেশ থেকে মালামাল জালিয়াতির মাধ্যমে ছাড়িয়ে নেন। বিদেশ থেকে টিটির মাধ্যমে অগ্রিম রেমিটেন্স এনে অগ্রিম রপ্তানি মূল্য হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রতারণা করেছেন।

তিনি ২০১৬ সালে আরব আমিরাতে আলমুতাফাওয়েক রেডিমেইড গার্ম টিআরডিজি নামে পোশাক বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ তিনি নিজেই পণ্যের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক। তিনি জাল সেলস কন্ট্রাক্ট তৈরি করে তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ব্যাংকের সাথে প্রতারণা করেন এবং বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল সংগ্রহ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথাকবে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল
পরবর্তী নিবন্ধগ্রাহকদের সাথে নিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানালো সেইলর