দায়িত্ব পালনের ১৫০ দিন পূর্ণ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। মাত্র ১৮০ দিনের জন্য গত ৬ আগস্ট প্রশাসকের দায়িত্ব নেন তিনি। স্বল্পসময়ের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিদিন নিজের কর্মকাণ্ড দিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি। নির্ধারিত যে ছয় মাসের জন্য প্রশাসকের চেয়ারে বসেন তার মধ্যে সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি আছে ৫৫ দিন। ওই হিসেবে কর্মদিবস মাত্র ১২৫ দিন। তাই স্বাভাবিকভাবে এত কম সময়ে নাগরিক প্রত্যাশা কতটা পূরণ করবেন সেটা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। কিন্তু নিজস্ব কর্মপদ্ধতিতে এগিয়েছেন তিনি। তাতেই তিনি সাফল্য পেয়েছেন।
১৫০ দিন পূর্তি উপলক্ষে গতকাল দৈনিক আজাদীর কাছে নিজের সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন প্রশাসক। খোরশেদ আলম সুজন বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতির শৃঙ্খল থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছি। যদিও এটা কঠিন কাজ। পুরোপুরি না পারলেও দুর্নীতির বরপুত্র ও সিন্দাবাদের দৈত্য যারা কর্পোরেশনের টাকা লুটপাট করে খেয়েছে তাদের লাগাম টেনে ধরেছি। অফিস ব্যবস্থাপনায় যে অনিয়ম ছিল তাতে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা এনেছি। আমার পরে যারা আসবেন তাঁরা যেন একটি সুশৃঙ্খল অফিস ব্যবস্থাপনায় কাজ শুরু করতে পারেন।
তিনি বলেন, আমার চেষ্টায় কমতি ছিল না। এরপরও যা পারিনি বা আমার ব্যর্থতা রয়েছে তার বিচারের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বিশ্বাস করে আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন, শতভাগ চেষ্টা করেছি পরিপূর্ণভাবে সে দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জন করার।
প্রশাসক বলেন, আমার যত সাফল্য সব নগরবাসীর সহযোগিতার কারণে সম্ভব হয়েছে। মূল ধারার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সমর্থন পেয়েছি, এতে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। শেরশাহ এলাকায় ৩০-৪০ বছর ধরে সড়ক-ফুটপাতে অবৈধ দখলদার ছিল। মানুষ হাঁটতে পারতো না। দখলমুক্ত করেছি। পুরো শহরে হকারদের শৃঙ্খলায় আনার জন্য কাজ করেছি। কিছু চোর হকার নেতার কারণে পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। হকারদের আইডি কার্ড দিতে চেয়েছিলাম। একটা মহল হকারদের কাছ থেকে টাকা নেয়। তারা হকারদের সিটি কর্পোরেশন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
সুজন বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা খাতে সুনাম ছিল। মাঝখানে সেটা ভেঙে পড়েছিল। সেটা পুনরুদ্ধারে কাজ করেছি। লালদীঘি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। সেটা সংস্কার করে মানুষের হাঁটার উপযোগী করেছি।
প্রশাসক বলেন, কর্পোরেশনে কর্মচারী নিয়োগে প্রক্রিয়াগত সমস্যা আছে। কে কোন দিকে কার বেতন নিচ্ছে ঠিক নাই। মেয়র মনজুর আলম চল্লিশজন ভিক্ষুককে কর্পোরেশনে চাকরি দেন। কথা ছিল তারা ভিক্ষা করবে না। ওই সময় তারা এক মাস ভিক্ষা থেকে বিরত ছিল। এরপর আবারো ভিক্ষা শুরু। তারা কাজও করে না। কর্মস্থলে গেলে তাদের দেখা মিলে না। অথচ গত সাত বছরে তারা চার কোটি টাকা বেতন নিয়েছে। এসব বেতন জনগণের ট্যাঙের টাকা। কাজ না করেই তাদের যে টাকা দিয়েছে তা দিয়ে কর্পোরেশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেত।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার সময় ১২শ কোটি টাকা দেনা ছিল। চেষ্টা করেছি আমার দায়িত্ব পালনকালে কর্পোরেশন এক টাকারও যেন ঋণগ্রস্ত না হয়। কর্পোরেশন থেকে চাকরি ছেড়ে যারা পথে পথে কাঁদছিল তাদের কিছু আনুতোষিকের টাকা পরিশোধ করেছি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত যারা অবসরে গেছেন তাদের আনুতোষিক দিয়েছি। ঠিকাদারদের পুরনো দেনা থেকে কিছুটা পরিশোধ করেছি। যদি বলেন, কিভাবে দিচ্ছি? সরকার কিন্তু আমাকে আলাদা বরাদ্দ দেয়নি, অফিস ব্যবস্থাপনা থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে দিয়েছি। আবার জনগণের মাঝেও চেতনা জেগেছে তারা ট্যাঙ দিচ্ছে, ট্রেড লাইসেন্স করছে। সেখান থেকে সাশ্রয় করে দেনা পরিশোধ করছি।
প্রশাসক বলেন, বিভিন্ন পত্রিকাও বিশ-ত্রিশ কোটি টাকা পাবে। আবার ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে পাবে এমন অনেক পত্রিকা আছে, যাদের নাম জীবনেও শুনিনি। মূল ধারার পত্রিকার চেয়েও এসব পত্রিকার বিল বেশি।
সুজন বলেন, অব্যবস্থাপনাই প্রধান সমস্যা। ৮-৯ হাজার জনবল আছে কর্পোরেশনে, কিন্তু কাজের লোক কম। যেমন দেড়শ-দুইশ বিদ্যুৎ হেলপার নিয়েছে। অথচ কাজে নেই তারা। সৌন্দর্যবর্ধন করেছে, কিন্তু যারা করেছে গাছে একটু পানিও দেয় না। কর্পোরেশনকে করতে হচ্ছে। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ফুটপাতে ফুটপাতে দোকান করেছে।